ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫

যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি বিক্রি করছেন আ.লীগ নেতারা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২৫, ০৭:০৫ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনামলে বিদেশে পাচার হওয়া বিপুল অর্থের তদন্ত শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ধারণা করা হচ্ছে, পাচার হওয়া অর্থের একটি বড় অংশ গিয়েছে যুক্তরাজ্যে। এ প্রক্রিয়ায় প্রধান ভূমিকা পালন করেছে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা এবং তার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে বসবাসরত সাবেক ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতারা তাদের বিলাসবহুল সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রি ও পুনঃঋণায়নের (রিফাইন্যান্স) কাজ তড়িঘড়ি করে সম্পন্ন করছেন। বিষয়টি উঠে এসেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এবং দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল-এর এক যৌথ অনুসন্ধানে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি কেনাবেচার তৎপরতা হঠাৎ বেড়ে যায়। বিশেষ করে নাইটসব্রিজ, রিজেন্টস পার্ক, ভার্জিনিয়া ওয়াটার ও গ্রোসভেনর স্কয়ারের মতো অভিজাত এলাকায় অস্বাভাবিক রকমের সম্পত্তি বিক্রি, হস্তান্তর ও ফ্রিজিং কার্যক্রম দেখা গেছে।

২০২৪ সালের মে মাসে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি প্রায় ১ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা মূল্যের একটি অ্যাপার্টমেন্ট জব্দ করে, যার মালিকানা ছিল সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান রহমান এবং ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের।

পরে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে থাকা প্রায় ২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকার ৩০০টিরও বেশি সম্পত্তি জব্দ করা হয়।

অনুসন্ধানে আরও উঠে আসে, বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান নাইটসব্রিজের একটি চারতলা বাড়ি এক গোপন হিসাবরক্ষকের কোম্পানির কাছে বিক্রি করেন (মূল্য: ৭.৩৫ মিলিয়ন পাউন্ড)।

তার ভাই শাফিয়াত সোবহান সারে ভার্জিনিয়া ওয়াটারের ৮ মিলিয়ন পাউন্ডের প্রাসাদোপম ম্যানশন হস্তান্তর করেন।

সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ভাই আনিসুজ্জামান রিজেন্টস পার্কের ১০ মিলিয়ন পাউন্ডের টাউনহাউস বিক্রি করেন ও আরও তিনটি সম্পত্তির রিফাইন্যান্স আবেদন করেন।

সালমান এফ রহমান পরিবারের মালিকানাধীন গ্রোসভেনর স্কয়ারের ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ইতোমধ্যে ফ্রিজ করে।

তবে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোর দাবি,মেএগুলো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ। তারা যেকোনো তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এসব সম্পত্তি যেন বিক্রি, স্থানান্তর বা বন্ধক না রাখা হয়।

গভর্নর মনসুর বলেন, ‌‌আমরা নিশ্চিত, অনেকেই ইতোমধ্যে সম্পদ বিক্রির চেষ্টা করছেন। তাই কঠোরভাবে এসব সম্পদ ফ্রিজ করা অত্যন্ত জরুরি।

ব্রিটিশ সংসদের দুর্নীতি বিষয়ক অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের প্রধান জো পাওয়েল বলেন, যথাসময়ে সম্পদ জব্দ না করলে, তা মুহূর্তেই গায়েব হয়ে যায়। লন্ডন যেন দুর্নীতিবাজদের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়াও তদন্তে প্রশ্ন উঠেছে, এসব সম্পত্তি লেনদেনে যুক্ত আইনজীবী ও পরামর্শদাতারা কি যথাযথ যাচাই-বাছাই ও সতর্কতা অবলম্বন করেছেন?

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই অনুসন্ধান শুধু বাংলাদেশে নয়, আন্তর্জাতিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের অবস্থানকেও এক গভীর পরীক্ষার মুখে ফেলেছে।