অনুমোদনহীন বৈদ্যুতিক যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারে কঠোর আইন পাস করেছে ইরান। এর আওতায় স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্ম স্টারলিংকসহ যেকোনো অননুমোদিত প্রযুক্তির ব্যবহারকে ‘জাতীয় নিরাপত্তাবিরোধী অপরাধ’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
অপরাধের মাত্রা অনুসারে এর শাস্তি হতে পারে কারাদণ্ড থেকে শুরু করে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত। ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইসনা জানিয়েছে, গত ২৩ জুন দেশটির পার্লামেন্টে আইনটি পাস হয় এবং ২৯ জুন (শনিবার) তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়।
নতুন আইনটির হলো ‘গোয়েন্দাগিরি, ইসরায়েল ও শত্রু রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করে জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থের বিরুদ্ধে অপরাধের শাস্তি বৃদ্ধি আইন’।
নতুন আইন অনুযায়ী, ইসরায়েল বা শত্রু রাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক বা গোয়েন্দা সহযোগিতা করলে তা “পৃথিবীতে দুর্নীতি” হিসেবে বিবেচিত হবে, যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
এই আইনের প্রয়োগে শুধু প্রযুক্তির ব্যবহার নয়, সেটি পাচার বা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাও কঠোর বিচারের আওতায় আসবেন বলে সতর্ক করেছে তেহরান সরকার।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের সঙ্গে টানা ১২ দিন ধরে চলা সাম্প্রতিক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইরান সরকার জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপকভাবে উদ্বিগ্ন।
বিশেষ করে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপ ও তথ্য পাচার নিয়ে শঙ্কা বেড়েছে। সরকার মনে করছে, স্টারলিংকের মতো উন্মুক্ত ও মনিটরবিহীন স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে শত্রু রাষ্ট্রগুলোর গোয়েন্দারা ইরানে অনুপ্রবেশ করতে পারে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের দাবি, চলমান সংঘাতকালে হাজার হাজার স্টারলিংক টার্মিনাল গোপনে ইরানে পাচার করা হয়। ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের সময় সাধারণ মানুষ যাতে বিকল্প পথে সংযুক্ত থাকতে পারে, সে জন্য এসব টার্মিনাল ব্যবহার করা হচ্ছিল। সরকারের আশঙ্কা, এভাবে জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে।
এর আগে, ২২ সালে ইরানে মাহসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা গণআন্দোলনে সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দিলে, তখন স্টারলিংক টার্মিনাল পাচারের চেষ্টা হয়েছিল। এমন সময় এলন মাস্ক প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি ইরানে স্টারলিংক সেবা চালু রাখতে প্রস্তুত, যেটি ইরান সরকারকে ক্ষুব্ধ করে। সে সময় থেকে ইরান স্টারলিংককে "বিদেশি হস্তক্ষেপের প্রতীক" হিসেবে দেখতে শুরু করে।