ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫

ঐকমত্য নয়, অচলাবস্থা তৈরি করছে নতুন নতুন প্রস্তাব: ফখরুল

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২৫, ১২:৫৮ পিএম
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি- সংগৃহীত

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে আগ্রহ ও প্রত্যাশা যেমন অনেক, তেমনি হতাশা ও উৎকণ্ঠাও রয়েছে জনমনে। বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা যেমন ৬টি সংস্কার কমিশনের কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি, তেমনি ঐকমত্য কমিশনের প্রতিদিনের আলোচনায় আমাদের প্রতিনিধিগণ কার্যকর অংশগ্রহণ করে চলেছেন।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছার জন্য আমাদের প্রতিনিধিগণ সভায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা এবং অনেক বিষয়ে ছাড় দিয়ে হলেও একমত হয়ে কমিশনের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার পর সংস্কার কমিশনগুলো যেসব প্রস্তাব পেশ করেছে, তার বিপরীত কিংবা নতুন নতুন প্রস্তাব উত্থাপন এবং তা নিয়ে অনেক সময় অচলাবস্থা সৃষ্টির কারণে কার্যক্রম বিলম্বিত হচ্ছে।’

রোববার (৬ জুলাই) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও সংশ্লিষ্ট সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে এসব কথা বলেন।


তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার নামে জনগণের নির্বাচিত সংসদ, সরকার তথা রাষ্ট্র কাঠামোকে দুর্বল করার প্রস্তাব সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এমন কোনো প্রয়াসে সমর্থন না জানিয়ে আমরা বরং সংস্কার প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করছি।’

প্রতিটি কমিশনে বিএনপির অবস্থান-

পুলিশ সংস্কার কমিশন:

র‌্যাব বিলুপ্তিসহ অধিকাংশ প্রস্তাবে ঐকমত্য হয়েছে, তবে কমিশনের আলোচনায় বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ওঠেনি।

দুদক সংস্কার কমিশন:

৪৭টি সুপারিশের মধ্যে ৪৬টিতে বিএনপি একমত হয়েছে। কেবল ২৯ নম্বর সুপারিশে ভিন্নমত, যেখানে তারা আদালতের অনুমতি ছাড়াই তদন্তের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন:

২০৮টি সুপারিশের মধ্যে ১৮৭টিতে একমত, ৫টিতে আংশিক একমত, এবং ১১টিতে ভিন্নমত।

বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন:

৮৯টি সুপারিশের মধ্যে ৬২টিতে একমত, ৯টিতে আংশিক এবং ১৮টিতে যুক্তিসহ ভিন্নমত। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংক্রান্ত সব প্রস্তাবে বিএনপি একমত।

নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন:

২৪৩টি সুপারিশের মধ্যে ১৪১টিতে একমত, ১৪টিতে আংশিক একমত, এবং ৬৪টিতে সংশোধনীসহ একমত। ২৪টি সুপারিশে একমত হয়নি।

সংবিধান সংস্কার কমিশন:

১৩১টি সুপারিশে দফাওয়ারি মতামত দিয়েছে বিএনপি। ‘৭০ অনুচ্ছেদ ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণে তারা ছাড় দিয়েছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা (আর্টিকেল ৪৯), তত্ত্বাবধায়ক সরকার, ন্যায়পাল আইন, সংসদীয় আসন সীমানা সংশোধন ও হাইকোর্ট বেঞ্চ নিয়েও বিএনপি সম্মত হয়েছে।

বৃহত্তর প্রেক্ষাপট:

ফখরুল বলেন, ‘আমরা অনেক বাস্তবায়ন-জটিল প্রস্তাবেও ঐকমত্য দিয়েছি, শুধু প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে। কিন্তু নতুন করে যেসব প্রস্তাব আসছে সেগুলোর প্রভাব রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সংসদের ওপর গুরুতর হবে। জনগণকে যুক্ত না করে এ ধরনের পরিবর্তন করার অধিকার কারো আছে কি না- তা বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি একদিকে স্বৈরাচারবিরোধী দীর্ঘ লড়াইয়ে সংগঠন হিসেবে শক্তিশালী হয়েছে, অন্যদিকে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে আমরা একটি বৈষম্যহীন, মানবিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দিলে যেমন ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়, তেমনি নির্বাচিত সরকার ও সংসদকে ক্ষমতাহীন করলেও রাষ্ট্র ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। আমরা যেন এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কাজ করি।’

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।