আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গৌরবোজ্জ্বল অর্জন এনে দিলেন বাংলাদেশের তরুণ ও নাটোর জেলা ছাত্রদল কর্মী শেখ রিফাদ মাহমুদ।
ভারত, ঘানা, নাইজেরিয়া ও কেনিয়ার পাঁচ প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাজিত করে তিনি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের ছাত্রবিষয়ক অফিসিয়াল সংস্থা কমনওয়েলথ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (CSA)-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট (ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পার্টিসিপেশন) পদে।
গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে কমনওয়েলথভুক্ত ৫৬টি দেশের ন্যাশনাল স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। আগামী তিন বছরের জন্য অ্যাসোসিয়েশনের মোট ১০টি নেতৃত্বস্থানীয় পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি দেশ থেকে একজন করে ডেলিগেট ভোট প্রদান করেন।
বাংলাদেশসহ কমনওয়েলথভুক্ত ৫৬টি দেশের প্রায় ১.৪ বিলিয়ন শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব এখন তার কাঁধে। ফলে এই জয় কেবল রিফাদের ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বাংলাদেশের তরুণ সমাজ ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের জন্যও এক অনন্য গৌরব। শিগগিরই লন্ডনে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব বুঝে নেবেন তিনি।
শেখ রিফাদ মাহমুদ বলেন, ‘আমি কমনওয়েলথভুক্ত সকল দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ন্যায়সংগত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ করব। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে শিক্ষায় সমান সুযোগ প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে সামনে থেকে প্রতিনিধিত্ব করাই আমার প্রধান লক্ষ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘সব শিক্ষার্থী সমান সুযোগ পায় না। অনেককেই নানা চ্যালেঞ্জ পেরোতে হয়, যার মধ্যে আর্থিক সংকট অন্যতম। বিশ্বে অসংখ্য শিক্ষার্থী পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হিমশিম খায়। এদের পাশে দাঁড়ানো বাকি শিক্ষার্থীদেরও দায়িত্ব। আমি এমন একটি কর্মসূচি নিতে চাই, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই পকেট মানি ও টিফিনের টাকা সঞ্চয় করবে এবং নিজেরাই সমস্যার সমাধান করবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এখান থেকে এমন একটি তহবিল তৈরি করা যাবে, যা আর্থিক সংকটে থাকা শিক্ষার্থীর কাজে আসবে। অর্থের অভাবে কেউ যেন লেখাপড়ায় পিছিয়ে না যায়।’
লন্ডনে অবস্থিত ব্রিটিশ কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের অধীন শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক সংস্থা CSA-এর এই নির্বাচনে মোট ছয় জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নাটোরের ছাত্রদল কর্মী শেখ রিফাদের নিরঙ্কুশ বিজয় তাই বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণাদায়ক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
বর্তমানে শেখ রিফাদ মাহমুদ জাতিসংঘ বাংলাদেশ যুব উপদেষ্টা পর্ষদের সদস্য এবং কমনওয়েলথ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন-এর এডুকেশন রিলেশনস অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের যুব প্যানেলে যুক্ত থেকে ইইউ ইয়ুথ এমপাওয়ারমেন্ট ফান্ড পর্যবেক্ষণে কাজ করছেন। এর আগে তিনি গ্লোবাল স্টুডেন্ট ফোরামের উপদেষ্টা পর্ষদে এবং জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামের যুব পর্যবেক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
শেখ রিফাদ দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন। শিক্ষা, নেতৃত্ব, কূটনীতি ও যুব উন্নয়নে তার সক্রিয় ভূমিকা আন্তর্জাতিক পরিসরে ইতোমধ্যেই প্রশংসিত হয়েছে।
২০১২ সালে মরিশাসে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ শিক্ষামন্ত্রীদের ১৮তম সম্মেলনে কমনওয়েলথ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠা হয়। সংগঠনটি শিক্ষার্থীদের অধিকার সুরক্ষা, উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রক্রিয়া ও আর্থিক সহায়তা সহজতর করা, মানসিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। বর্তমানে এটি কমনওয়েলথভুক্ত ৫৬টি দেশের শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠস্বর হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিনিধিত্ব করছে।