রাজবাড়ী সদর উপজেলার বাণীবহ ইউনিয়নের শিবরামপুর গ্রাম এখন অতিথি পাখির কলতানে মুখর। শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই গ্রামজুড়ে নেমেছে পাখির মেলা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাখির ডানার ঝাপটানি আর কিচিরমিচিরে মুখর চারদিক। প্রকৃতির এ মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন পাখিপ্রেমী ও দর্শনার্থীরা।
গ্রামের করবাড়ির পুকুরপাড় ঘিরে উঁচু গাছগুলো এখন পরিযায়ী পাখিদের স্থায়ী আশ্রয়স্থল। গাছে গাছে শত শত বাসা কোথাও পাখি ডিমে তা দিচ্ছে, কোথাও সদ্য ফোটা ছানা মায়ের ডাকে সাড়া দিচ্ছে। স্থানীয়রা জানালেন, প্রায় আট মাস ধরে পাখিগুলোর বসবাস এখানে। প্রতিদিন সকালবেলায় তারা আশপাশের জলাশয়, বিল ও পুকুরে খাবারের খোঁজে যায় এবং বিকেলে ফিরে আসে বাসায়।
স্থানীয় আকাশ কর বলেন, প্রায় ১০-১২ হাজার পাখি এখন এখানে থাকে। সারাক্ষণ তাদের কিচিরমিচির শুনতে ভালো লাগে। এখন এই দৃশ্য আমাদের এলাকার গর্ব।
দর্শনার্থী দুলাল হোসেন বলেন, অতিথি পাখির কথা শুনে জামালপুর থেকে দেখতে এসেছি। এই পাখিগুলো পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, তাই সরকারের উচিত তাদের সুরক্ষায় স্থায়ী উদ্যোগ নেওয়া।
রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, শীতপ্রধান দেশ থেকে এসব পরিযায়ী পাখি বাংলাদেশে আসে মূলত খাবার ও বংশবিস্তারের জন্য। তারা শামুক, ছোট মাছ ও পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে এবং পরিবেশের জন্য অত্যন্ত উপকারী ভূমিকা রাখে।
পাখির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজবাড়ী বন বিভাগ নিয়মিত নজরদারি করছে বলে জানান বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর সায়েদুর রহমান। তিনি বলেন, এখন প্রতিদিন একজন কর্মকর্তা বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত দায়িত্বে থাকেন। স্থানীয়দের সচেতন করা হচ্ছে এবং পাখি শিকারের প্রবণতা বন্ধ হয়েছে।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, অতিথি পাখিগুলোর সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বন বিভাগকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এলাকাজুড়ে জনসচেতনতা বাড়াতে মাইকিং ও সাইনবোর্ড স্থাপন করা হচ্ছে।
রাজবাড়ীর শিবরামপুর এখন যেন এক পাখির রাজ্য। প্রকৃতিপ্রেমীদের পদচারণায় জমে উঠেছে গ্রামটি। অতিথি পাখির এ আগমনে স্থানীয়দের মুখেও এখন শুধু একটাই কথা এদের রক্ষা করতে পারলে প্রকৃতি আরও সুন্দর হবে।

