চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসদরের শ্রীমাই খালে স্থানীয় এক যুবদল নেতার নেতৃত্বে অবৈধ বালু উত্তোলন চলছে। এতে একদিকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব, অন্যদিকে খালের তীর ভাঙন ও কৃষিজমি চরম ক্ষতির মুখে পড়ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পৌরসদরের ৭নং ওয়ার্ডের বাহুলী এলাকায় প্রতিদিন গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। প্রশাসনের নিরব ভূমিকার সুযোগে তারা দিন-রাত ডজনখানেক ট্রাকে বালি পরিবহন করছে। এর ফলে সড়কের বেহাল দশা তৈরি হয়েছে, আর স্থানীয়দের নিরাপত্তাও মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, যুবদল নেতা এস. এম. রেজা রিপন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী এনামুল হক এনামের প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ বালু ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসনের তৎপরতা না থাকায় প্রতিদিন খালের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
খালে বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে নির্মিত হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির হাইড্রোলিক অ্যালিভেটর ড্যাম। পাশাপাশি খালের দুই তীরের ভাঙন রোধে ৪.৪ কিলোমিটার এলাকায় ব্লক বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় প্রায় ১৩৩ কোটি টাকা এবং ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পটিয়া পৌরসভা ও হাইদগাঁও, কেলিশহর ও কচুয়াই ইউনিয়নের প্রায় ১,১০৮ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা পাওয়া যাবে। ২০২৩ সালের ১৭ জানুয়ারি একনেক সভায় অনুমোদন পাওয়া এই প্রকল্পটি ২০২৬ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। সম্পন্ন হলে শুষ্ক মৌসুমে এটি ৩৭ কোটি লিটার পানি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন হবে, যা এলাকার কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটাতে পারে।
কিন্তু অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে খালের দুই তীর ভেঙে পড়ছে, পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে এবং পুরো প্রকল্পের কাঠামো হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ইজারাবিহীনভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হাইদগাঁও এলাকার কৃষকরা বিপাকে পড়েছেন। সরকার যেখানে শত কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নয়ন কাজ করছে, সেখানে অসাধু সিন্ডিকেট খাল ভেঙে কৃষিজমি ধ্বংস করছে।’
পৌর যুবদলের আহ্বায়ক আবসার উদ্দিন সোহেল বলেন, ‘এস. এম. রেজা রিপন বর্তমান যুবদলের কমিটির কেউ নন। তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে যুবদলের নাম ব্যবহার করতে পারেন।’
রফিক নামের এক কৃষক জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই অসাধু চক্র আমাদের জমি নষ্ট করছে। প্রশাসন জানলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা দ্রুত প্রতিকার চাই।’
বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশী এনামুল হক এনাম অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ‘কোনো চোর-ডাকাত বা সন্ত্রাসীর স্থান আমার দলে নেই। রিপন অপরাধে জড়িত থাকলে প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা নিক। আমার নাম বা দলের নাম ব্যবহার করে কেউ অপরাধ করলে তার দায় আমি বা দল নেবে না।’
পটিয়া উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রয়া ত্রিপুরা বলেন, ‘ওই খালে কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। কেউ যদি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে থাকে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানুর রহমান জানান, ‘কয়েকদিন আগেও আমরা অভিযান চালিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করেছিলাম। যদি পুনরায় এমন কাজ হয়, তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’



