রমজানের শেষ দশ দিন হলো নাজাতের (জাহান্নাম থেকে মুক্তি) বিশেষ সময়। এই সময় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁর বান্দাদের মুক্তি প্রদান করেন, গুনাহ ক্ষমা করেন এবং লাইলাতুল কদরের মতো বরকতময় রাত প্রদান করেন, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। তাই এই সময়ে আমাদের উচিত ইবাদত-বন্দেগি আরও বাড়িয়ে দেওয়া, আত্মশুদ্ধির জন্য বিশেষ আমল করা, এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করা।
নিম্নে রমজানের শেষ দশ দিনে করণীয় বিশেষ আমল ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করা হলো—
১. ইবাদত বৃদ্ধি ও ইতিকাফ করা
রমজানের শেষ দশ দিন আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বোত্তম সময়। এ সময় আমাদের উচিত ইবাদত বৃদ্ধি করা এবং ইতিকাফের মাধ্যমে নিজেকে আল্লাহর ইবাদতে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত করা। ইতিকাফ হলো এমন একটি আমল যেখানে একজন মুসলিম মসজিদে অবস্থান করে ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থাকেন, পার্থিব কাজকর্ম থেকে নিজেকে দূরে রেখে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে সময় কাটান।
ইতিকাফের রয়েছে অসংখ্য ফজিলত। রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি বছর রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন এবং সাহাবাদেরও উৎসাহিত করতেন। ইতিকাফ পালনের মাধ্যমে আমরা দুনিয়ার ঝামেলা থেকে মুক্ত থেকে আল্লাহর ইবাদতে নিমগ্ন হতে পারি। ইতিকাফের সময় অধিক পরিমাণে নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির ও দোয়া করা উচিত। বিশেষত, শেষ দশকের রাতগুলোতে আমাদের উচিত গভীর ইবাদত করা, কারণ এই সময়েই লাইলাতুল কদর পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২. লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান ও ইবাদত করা
রমজানের শেষ দশ দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করা। আল্লাহ তাআলা কুরআনে লাইলাতুল কদরকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ, এই এক রাতের ইবাদতের সওয়াব প্রায় ৮৩ বছরের ইবাদতের সমান। এটি এমন একটি বরকতময় রাত, যখন ফেরেশতারা পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের দরজা উন্মুক্ত থাকে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমরা রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো” (বুখারি ও মুসলিম)। অর্থাৎ, ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯তম রাতগুলোতে এই রাত পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই আমাদের উচিত এই রাতগুলোতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করা, বেশি বেশি নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির ও দোয়া করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই রাতের জন্য একটি বিশেষ দোয়া শিখিয়েছেন: “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি” (হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন)।
এই রাতের ইবাদত আমাদের জন্য অনন্ত কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। তাই আমাদের উচিত মনোযোগ দিয়ে এই রাতগুলোতে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা, নিজের গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং জান্নাত লাভের জন্য দোয়া করা।
৩. তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া
রমজানের শেষ দশ দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো তাহাজ্জুদ নামাজ। এটি এক বিশেষ নফল নামাজ, যা রাতের শেষ অংশে পড়া হয় এবং আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভের অন্যতম মাধ্যম। তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসে অসংখ্য ফজিলতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেন, “তারা রাতের শেষ প্রহরে ক্ষমা প্রার্থনা করে” (সূরা আয-যারিয়াত: ১৮। এই নামাজ আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এবং বিশেষ করে রমজানের শেষ দশ দিনে এই নামাজের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়, কারণ এই সময়েই লাইলাতুল কদর পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম হলো, এটি এশার নামাজের পর কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে উঠে রাতের শেষ ভাগে আদায় করা হয়। সাধারণত দুই রাকাত থেকে শুরু করে যত ইচ্ছা পড়া যায়, তবে রাসুল (সা.) সাধারণত ৮ বা ১১ রাকাত পড়তেন। নামাজের পর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা, দোয়া এবং ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার জন্য অনুরোধ করা উচিত। এই সময় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষমা করেন এবং দোয়া কবুল করেন। তাই আমাদের উচিত এই বিশেষ সময়ে জেগে থেকে তাহাজ্জুদ পড়া ও আল্লাহর রহমত লাভের জন্য প্রার্থনা করা।
৪. বেশি বেশি ইস্তিগফার ও তওবা করা
রমজানের শেষ দশ দিন ক্ষমা লাভের শ্রেষ্ঠ সময়। এ সময় আল্লাহর দরবারে বেশি বেশি ইস্তিগফার ও তওবা করা উচিত, কারণ এই সময় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের গুনাহ মাফ করেন। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন কর” (সূরা হূদ: ৩)। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও দিনে শতবার ইস্তিগফার করতেন এবং তাঁর উম্মতকেও এটি বেশি বেশি করতে বলেছেন।
ইস্তিগফার হলো আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া, আর তওবা হলো নিজের ভুলগুলো বুঝতে পেরে ভবিষ্যতে সেগুলো না করার প্রতিজ্ঞা করা। তওবার কয়েকটি ধাপ রয়েছে:
১. নিজের গুনাহ স্বীকার করা – বোঝা যে আমরা ভুল করেছি এবং আল্লাহর কাছে তা স্বীকার করা।
২. আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়া – শুধুমাত্র মুখে নয়, বরং হৃদয় থেকে অনুশোচনা করা।
৩. পুনরায় সেই গুনাহ না করার সংকল্প করা – গুনাহ থেকে দূরে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৪. পূর্ববর্তী গুনাহ সংশোধনের চেষ্টা করা – যদি কারও হক নষ্ট করা হয়, তাহলে তা ফিরিয়ে দেওয়া বা সংশোধন করা।
রমজানের এই বরকতময় দিনগুলোতে আমাদের উচিত বেশি বেশি ইস্তিগফার করা, বিশেষত রাতের শেষ ভাগে আল্লাহর কাছে কাঁদতে কাঁদতে ক্ষমা চাওয়া, কারণ এই সময় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষমা করেন।
৫. কুরআন তিলাওয়াত বৃদ্ধি করা
রমজান হলো কুরআন নাজিলের মাস, তাই এই মাসে কুরআন তিলাওয়াতের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, “রমজান মাস, যে মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য পথনির্দেশ” (সূরা আল-বাকারা: ১৮৫)। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই মাসে জিবরাইল (আ.)-এর সঙ্গে পুরো কুরআন তিলাওয়াত করতেন এবং সাহাবারা রমজানে প্রচুর কুরআন পড়ার অভ্যাস করতেন।
কুরআন পড়ার পাশাপাশি তার অর্থ বোঝার চেষ্টাও করা উচিত। অনেক সময় আমরা শুধু তিলাওয়াত করি, কিন্তু তার মর্মার্থ জানি না। অথচ কুরআনের শিক্ষাগুলো আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। কুরআন অধ্যয়ন করলে আমরা জানতে পারব কীভাবে একজন ভালো মুসলিম হিসেবে জীবন যাপন করা যায়, কীভাবে গুনাহ থেকে বাঁচা যায়, এবং কীভাবে জান্নাতের পথ সুগম করা যায়।
রমজানের এই শেষ দশ দিনে আমাদের উচিত প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ কুরআন তিলাওয়াত করা, তার অর্থ বোঝা এবং আমাদের জীবনে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা। এই মাসেই আমাদের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে যেন পুরো বছর কুরআনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় থাকে।
৬. দান-সদকা করা
রমজানের শেষ দশ দিন শুধু ইবাদতের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি দান-সদকারও শ্রেষ্ঠ সময়। এই মাসেই আমাদের উচিত গরিব-দুঃখী, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের সাহায্য করা। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, "যারা নিজেদের সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি শস্যবীজের মতো, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মে এবং প্রতিটি শীষে একশত করে দানা থাকে" (সূরা আল-বাকারা: ২৬১)। অর্থাৎ, এই মাসে একটি ছোট দানও বহুগুণ বৃদ্ধি হয়ে আমাদের আমলনামায় সওয়াব হিসেবে জমা হবে।
দান-সদকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো গরিব ও অসহায় মানুষদের সহায়তা করা। যাদের খাদ্য বা পোশাকের অভাব রয়েছে, তাদের পাশে দাঁড়ানো রমজানের অন্যতম বড় ফজিলতপূর্ণ কাজ। অনেক মানুষ সারা বছর অর্থকষ্টে ভোগে, তাই রমজান তাদের জন্য একটি আশার আলো নিয়ে আসে, যখন দানশীল ব্যক্তিরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
এ ছাড়া, মসজিদ-মাদ্রাসায় দান করা একটি বড় সওয়াবের কাজ। মাদ্রাসাগুলোতে যারা দ্বীন শিক্ষা গ্রহণ করছে, তাদের সহযোগিতা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এতিম ও বিধবাদের সাহায্য করাও দান-সদকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "আমি এবং এতিমের তত্ত্বাবধায়ক জান্নাতে এভাবে থাকব" বলে তিনি তাঁর দুটি আঙুল একসঙ্গে মিলিয়ে দেখালেন (বুখারি)।
তাই আমাদের উচিত এই শেষ দশ দিনে আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী দান করা, যাতে আমরা আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভ করতে পারি এবং দানশীলদের কাতারে স্থান পাই।
৭. শেষ জুমার গুরুত্ব (জুমাতুল বিদা)
রমজানের শেষ শুক্রবার বা জুমাতুল বিদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এটি বছরের শেষ জুমার দিন হওয়ায় অনেক মুসলিম এই দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে থাকেন। যদিও ইসলামে এটি কোনো নির্দিষ্টভাবে নির্দেশিত ইবাদতের দিন নয়, তবে এটি আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার একটি সুবর্ণ সুযোগ।
জুমার দিন বিশেষভাবে বরকতময়, আর রমজানের শেষ জুমা তো আরও বেশি ফজিলতপূর্ণ। এই দিনে আমাদের উচিত আগেভাগে মসজিদে যাওয়া, গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং বেশি বেশি ইবাদত করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যখন কোনো বান্দা আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে, তা কবুল করা হয়” (বুখারি ও মুসলিম)। তাই আমাদের উচিত এই দিনটিকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো।
এই দিনে দান-সদকার গুরুত্বও অনেক বেশি। অনেক সাহাবি শেষ জুমার দিনে বেশি বেশি দান করতেন এবং গরিবদের খাবার বিতরণ করতেন। আমাদেরও উচিত এই বিশেষ দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করা এবং অন্যদের সহযোগিতা করা।
৮. পরিবারের জন্য দোয়া করা
রমজানের শেষ দশ দিনে শুধু নিজের জন্য নয়, বরং পরিবারের সকল সদস্যের জন্য দোয়া করা উচিত। ইসলাম আমাদের শেখায় যে, আমরা শুধু নিজেদের জন্য চিন্তা করব না, বরং আমাদের পরিবার, আত্মীয়স্বজন, এবং পুরো মুসলিম উম্মাহর জন্যও দোয়া করব।
পিতা-মাতার জন্য দোয়া করা সন্তানের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, “তোমার প্রতিপালক আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করবে না এবং পিতামাতার প্রতি সদয় ব্যবহার করবে” (সূরা বনী ইসরাইল: ২৩)। আমাদের উচিত আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা যেন তিনি আমাদের পিতা-মাতাকে ক্ষমা করেন, তাদের ভালো স্বাস্থ্য দান করেন এবং দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ দান করেন
এ ছাড়া, আমাদের আত্মীয়স্বজনের জন্যও দোয়া করা উচিত। অনেক সময় আত্মীয়দের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়, মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। রমজান হলো সে সম্পর্কগুলো পুনরুদ্ধারের সময়। আল্লাহ আমাদের ক্ষমাশীল হতে বলেছেন, তাই আমাদের উচিত নিজেদের মনকে পরিশুদ্ধ করে সকলের জন্য মঙ্গল কামনা করা।
সবশেষে, পুরো মুসলিম উম্মাহর জন্য দোয়া করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকের সময়ে মুসলিম বিশ্ব নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের উচিত আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা, যেন তিনি সমস্ত মুসলিমদের নিরাপত্তা, শান্তি ও সমৃদ্ধি দান করেন।
রমজানের শেষ দশ দিন নাজাতের শ্রেষ্ঠ সময়। এই দিনগুলোতে আল্লাহ বান্দাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং জান্নাতের পথ সুগম করেন। তাই আমাদের উচিত এই মূল্যবান সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করা, বেশি বেশি ইবাদত করা, কুরআন পড়া, দান-সদকা করা এবং আত্মশুদ্ধির চেষ্টা করা।
এই দশ দিনে আমরা যদি মন থেকে আল্লাহর দিকে ফিরে যাই, তাহলে তিনি আমাদের গুনাহ মাফ করবেন এবং আমাদের জীবনে বরকত দান করবেন। তাই আসুন, আমরা এই শেষ দশ দিনকে যথাযথভাবে কাজে লাগাই এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের সর্বোচ্চ চেষ্টা করি।

-20250314104955.webp)
-20250314060714.webp)
-20250314052819.webp)

