জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- থেকে বের হতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেছেন গৃহায়ন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। তিনি বলেছেন, জুলাইয়ের ৩৬ দিন বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে, ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটেছে। শত শহিদের রক্তের ওপর দিয়ে অনেক আহত যোদ্ধা এখনো আরোগ্য লাভের অপেক্ষায় আছে। বাংলাদেশ আজকে একটা নতুন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, যখন গুমের শিকার হওয়ার কথা বলতে পারছেন। আমরা জানতাম না, তারা কোথায় ছিল। ফ্যাসিবাদী শাসন বাংলাদেশকে গুম করে ফেলেছিল। বাংলাদেশকে বন্দি করে ফেলেছিল। বাংলাদেশকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের পর থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে আসতে পেরেছে।
গতকাল শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মীর আহমাদ বিন কাসেম (আরমান) রচিত ‘আয়নাঘরের সাক্ষী : গুম জীবনের আট বছর’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও ‘গুম ফ্যাসিবাদী শাসনের নিকৃষ্ট হাতিয়ার’ শীর্ষক সেমিনার উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অপরাধীদের বিচারের জন্য চেষ্টা চলছে। বিচার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশে জনগণ এবং যারা নির্যাতিত মানুষ বিচার পাবেন অন্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটবে। জুলাই জাতীয় সনদ ও জুলাই ঘোষণার ভিত্তিতে বাংলাদেশ নতুন বাংলাদেশে রূপান্তর হবে।’
অনুষ্ঠানে ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এ দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। মানুষ মেরেছে, হত্যা করেছে, গুম করেছে। কিন্তু এখনো তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা আসেনি। তারা আয়নাঘরের বিষয়গুলো সামনে আসলে সেগুলোকে সাজানো নাটক বলে। তাই আওয়ামী লীগ ও তার অনুসারীদের যেখানে দেখবেন আইনের হাতে তুলে দেবেন।’
মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, ‘আয়নাঘরের সাক্ষী বইটি গুম ও নির্যাতনের ভয়াবহ বাস্তবতা সামনে এনেছে। ছোট ডিটেনশন সেলে ইলেকট্রিক শক, ঝুলিয়ে নির্যাতন, লেথাল ইনজেকশন, রেললাইনে ফেলে দেওয়া, বুড়িগঙ্গা-শীতলক্ষ্যা নদী বা অন্যান্য জায়গায় নিয়ে তাদের পেট ছিঁড়ে সিমেন্টের বস্তা দিয়ে ভারী করে তাদের ফেলে দেওয়াÑ এসব ছিল ফ্যাসিবাদী শাসনের নৃশংস হাতিয়ার।’
গুমফেরত সাবেক ব্রিগেডিয়ার আব্দুল্লাহিল আমান আযমি বলেন, ‘পৃথিবীতে এমন কোনো বিপ্লব নেই যেখানে শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ অংশগ্রহণ করেছে এবং সফল হয়েছে। জুলাই বিপ্লব হয়েছে দুর্নীতি, জুলুম বন্ধ করে মানুষের আকাক্সক্ষার প্রতিফলনের জন্য।’
বইয়ের লেখক ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেম (আরমান) আট বছর গুম জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘গুম থেকে ফেরত আসার পরও আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম যে, আমি থাকব না, দেশে চলে যাব। দরকার নাই, যেখানে অধিকার নাই, যেখানে আইন নাই, যেখানে আদালত নাই, যেখানে সংবিধান নাই, থাকব না সেই দেশে। কিন্তু যখন সুমনের মায়ের দিকে তাকাই, সুমনের মা যখন প্রশ্ন করে, ‘আমার বাবা কোথায়?’ তখন মনে করি, সৃষ্টিকর্তা আমাকে নিজ হাতে জীবিত রেখেছেন। আমার দায়িত্ব তাদের জন্য কথা বলা, যারা জীবিত বের হতে পারেননিÑ আসুক যত বিপদ, আসুক যত হুমকি, যাব না এই দেশ থেকে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের হেড অব মিশন হুমা খান, বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিকী, আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান, ব্যারিস্টার মীর আহমাদ বিন কাসেমের (আরমান) মা খন্দকার আয়েশা খাতুন ও তার স্ত্রী ফারহানা ফাখরুবা তাহমিনা, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার তাজরিয়ান আকরাম খান ও প্রচ্ছদ প্রকাশনের চেয়ারম্যান রাজিফুল হাসান বাপ্পী, ডাকসুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক মুসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ, শেখ মুজিবুর রহমান হল সংসদের ভিপি মুসলিমুর রহমান প্রমুখ।

