বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ১৯৭২ সাল থেকেই গড়ে উঠেছে। সময়ের সাথে এই সম্পর্ক এখন উন্নয়ন, বাণিজ্য, কৃষি ও পানি ব্যবস্থাপনায় এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও টেকসই উন্নয়নে নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার হয়ে উঠেছে।
পানি ব্যবস্থাপনায় ডাচ সহায়তা
নেদারল্যান্ডস পৃথিবীর অন্যতম উন্নত দেশ পানি ব্যবস্থাপনা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তারা বাংলাদেশের ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে। এই পরিকল্পনার লক্ষ্যÑ ভবিষ্যতের বন্যা, নদীভাঙন ও লবণাক্ততার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
এ ছাড়া নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে ১২টি শহরে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রায় ৬.৪ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ
নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশের অন্যতম বড় রপ্তানি বাজার। তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও কৃষিপণ্য ডাচ বাজারে জনপ্রিয়। অন্যদিকে, নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বিনিয়োগকারী দেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে নেদারল্যান্ডসের সরাসরি বিনিয়োগ ছিল প্রায় ৩০৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মোট বিদেশি বিনিয়োগের প্রায় ৮.৭ শতাংশ।
এ ছাড়া, দুই দেশের মধ্যে নতুন কর চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন নেদারল্যান্ডস থেকে প্রাপ্ত প্রযুক্তি ও সেবার ওপর ১০ শতাংশ উৎসকর নিতে পারবে।
কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় সহযোগিতা
‘ফুডটেক বাংলাদেশ’ নামে একটি প্রকল্পে নেদারল্যান্ডস প্রায় ৬ মিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সিলেট, খুলনা ও কক্সবাজারে তিনটি আধুনিক মৎস্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে, যেখানে ১,৬০০ এর বেশি মাছচাষি আধুনিক প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ পাবেন।
এ ছাড়া ডাচ বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের দুগ্ধ শিল্প ও সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণেও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছেন।
পরিবেশ ও জলবায়ু সহায়তা
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। এ বাস্তবতায় নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশকে টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও উপকূলীয় এলাকা রক্ষায় সহযোগিতা দিচ্ছে।
সম্প্রতি নেদারল্যান্ডস ঘোষণা দিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশের পরিবেশ ও পানি ব্যবস্থাপনা খাতে সহায়তা আরও বাড়াবে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বাংলাদেশ সরকার চায় নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, কোল্ড স্টোরেজ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে আরও সহযোগিতা বাড়াতে। দুই দেশের কর্মকর্তারা মনে করেন, একসঙ্গে কাজ করলে টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সম্ভব।
উপসংহার
পানি থেকে পোশাকÑ বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের বন্ধুত্ব আজ বহুমুখী। উন্নয়ন সহযোগিতা, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও বাণিজ্য বাড়ানোর মাধ্যমে এই সম্পর্ক শুধু অর্থনৈতিক নয়, মানবিক বন্ধন হিসেবেও ক্রমেই দৃঢ় হয়ে উঠছে।
শাখাওয়াত হোসেন মামুন
প্রেসিডেন্ট, ডাচ্-বাংলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি

