ঢাকা রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫

প্রতিদিনের ৬টি খাবার হতে পারে ক্যান্সারের নীরব শত্রু

স্বাস্থ্য ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৫, ০৫:১৪ এএম
ছবি- সংগৃহীত

আজকাল ক্যান্সার যেন এক অদৃশ্য আতঙ্ক। আধুনিক জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক চাপ-সবই এই রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, আমাদের প্রতিদিনের কিছু প্রিয় খাবারই নীরবে শরীরে ক্যান্সারের বীজ বুনে দিচ্ছে।

হার্ভার্ড-প্রশিক্ষিত গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ডা. সৌরভ শেঠি সম্প্রতি ৬টি খাবারের কথা জানিয়েছেন, যেগুলো নিয়মিত খেলে ক্যান্সারের সম্ভাবনা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যায়।

ডা. শেঠির মতে, এই খাবারগুলো খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া বা অন্তত কমিয়ে আনলে শরীরের ভেতরে দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।

১. প্রক্রিয়াজাত মাংস: নীরব ঘাতক

সসেজ, সালামি বা হ্যাম এই খাবারগুলো প্রোটিনের সহজ উৎস মনে হলেও এগুলো আসলে শরীরের শত্রু। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, প্রক্রিয়াজাত মাংস ‘গ্রুপ–১ কার্সিনোজেন’, অর্থাৎ প্রমাণিত ক্যান্সার–সৃষ্টিকারী খাবার। এতে থাকা নাইট্রেট ও সংরক্ষক অন্ত্রের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

নিরাপদ বিকল্প: ঘরে রান্না করা মুরগি, ডাল বা উদ্ভিজ্জ প্রোটিন।

২. চিনি–সমৃদ্ধ কোমল পানীয়

কোলা বা বিভিন্ন ফ্লেভারড ড্রিংক শুধু রক্তে চিনি বাড়ায় না, শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহও সৃষ্টি করে—যা ক্যান্সার কোষের জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত এসব পানীয় পান করলে স্তন, অগ্ন্যাশয় ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

নিরাপদ বিকল্প: ডাবের পানি, ফল–মিশ্রিত পানি বা হার্বাল চা।

৩. অতিরিক্ত ভাজা খাবার

ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চপ, সমুচা বা পুরনো তেলে বারবার ভাজা খাবারে তৈরি হয় ‘অ্যাক্রিলামাইড’ নামের ক্ষতিকর যৌগ। এটি শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বাড়িয়ে কোষের ক্ষতি করে এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায়।

নিরাপদ বিকল্প: বেক বা এয়ার–ফ্রাইড স্ন্যাকস, ভাপানো সবজি।

৪. পুড়ে যাওয়া বা অতিরিক্ত গ্রিল করা মাংস

বারবিকিউ পার্টি বা গ্রিলড মাংসের পোড়া অংশ যতটা সুস্বাদু মনে হয়, ততটাই বিপজ্জনক। পোড়া অংশে তৈরি হয় HCAs ও PAHs নামের যৌগ, যা ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ক্যান্সারের আশঙ্কা বাড়ায়।

নিরাপদ বিকল্প: ধীরে রান্না করা বা বেক করা মাংস, সঙ্গে রোজমেরি বা থাইমের মতো হার্ব ব্যবহার।

৫. অ্যালকোহল: প্রতিদিনের বিষ

‘অল্প পরিমাণ অ্যালকোহল ক্ষতিকর নয়’ এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ডা. শেঠির মতে, সামান্য অ্যালকোহলও শরীরে বিপজ্জনক প্রভাব ফেলে। এটি লিভার, স্তন ও খাদ্যনালী ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে দেয়।

নিরাপদ বিকল্প: কোম্বুচা, ডালিমের রস বা বিটরুট কানজি।

৬. অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবার: আধুনিক যুগের ফাঁদ

ইনস্ট্যান্ট নুডলস, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, রেডি-টু-ইট খাবার বা ফাস্ট ফুডে থাকে কৃত্রিম রং, অতিরিক্ত চিনি ও ট্রান্স ফ্যাট, যা শরীরে প্রদাহ বাড়িয়ে ক্যান্সারের ক্ষেত্র তৈরি করে।

নিরাপদ বিকল্প: ঘরে তৈরি খিচুড়ি, ওটস বা সবজি–ডাল সমৃদ্ধ খাবার।

ডা. সৌরভ শেঠির মতে, ক্যান্সার প্রতিরোধ শুরু হয় আমাদের প্রতিদিনের প্লেট থেকেই। প্রক্রিয়াজাত ও চিনি-সমৃদ্ধ খাবার বাদ দিয়ে যদি আমরা তাজা, প্রাকৃতিক ও ঘরে তৈরি খাবার বেছে নিই, তবে ভয়ংকর এই রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।

সতর্ক থাকুন, সচেতন থাকুন-কারণ আপনার আজকের খাবারই নির্ধারণ করবে আগামীর সুস্থতা।