শনিবার, ১০ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ৯, ২০২৫, ০৪:৫৫ পিএম

ইসলামে যুদ্ধ করার নিয়ম কী

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ৯, ২০২৫, ০৪:৫৫ পিএম

ইসলামে যুদ্ধ করার নিয়ম কী

প্রতীকী ছবি

মানবজীবনে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় যুদ্ধের কারণে। যুদ্ধ সবসময় এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়। তবুও পৃথিবীতে যুদ্ধের ইতিহাস দীর্ঘ। বিশেষত কোনো পক্ষ অন্যায়, অবিচার ও জুলুমের সীমা অতিক্রম করলে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। নির্যাতিত মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ একমাত্র অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণেই ইসলামে যুদ্ধের বিধান রাখা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমাদের কী হলো? তোমরা কেন আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করছ না? অথচ নির্যাচিত নারী, পুরুষ ও শিশুরা চিৎকার করে করে বলছে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে এই জনপদ থেকে বের করে নিয়ে যান, যার অধিপতিরা অত্যাচারী। আমাদের জন্য একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন এবং আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী প্রেরণ করুন। (সুরা নিসা: ৭৫)

এই আয়াতে স্পষ্টভাবেই নির্যাতিত মানুষের মুক্তির জন্য যুদ্ধে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আর তোমরা ওই সব কাফেরের সঙ্গে যুদ্ধ করো যারা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে আসে। আর তোমরা সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। (সুরা বাকারা: ১৯০)

ইসলামে যুদ্ধের অনুমতি শুধু কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়। বরং সেই যুদ্ধ হতে হবে মজলুমের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচারকে প্রতিহত করার জন্য, মানুষের হৃত অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য, সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা, ন্যায়বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য। সর্বোপরি মানুষকে কর্তৃত্ববাদীদের গোলামি থেকে বের করে আল্লাহর বন্দেগি করার উপযোগী পরিবেশ তৈরির জন্য। 

তবে যুদ্ধ করতে গিয়েও আবেগতাড়িত হয়ে কেউ যেন নিরপরাধ মানুষের জান, মাল ও ইজ্জতের ক্ষতি করে না বসে, সেজন্য ইসলাম দিয়েছে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা।

নিম্নে এ সংক্রান্ত কিছু বিষয় পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হলো-

বেসামরিক নাগরিক হত্যার ব্যাপারে ইসলামের বিধান

যুদ্ধের ময়দানে যারা যুদ্ধ করতে আসবে, শুধু তাদের সঙ্গেই যুদ্ধ হবে। যুদ্ধের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক নেই এমনকি শত্রু বাহিনীর সেনাদের স্ত্রী-সন্তানদেরও হত্যা করা যাবে না। হাদিসে এসেছে, নবীজি (স.)-এর যুগে কোনো এক যুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্রে একজন মহিলাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল। নবীজি খুব বিরক্তি প্রকাশ করলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে মহিলা ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করে ফরমান জারি করলেন। (বুখারি : ৩০১৫)

নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের হত্যা করা যাবে না

যুদ্ধ অবস্থায়ও নিরাপরাধ নারী, বৃদ্ধ ও শিশুদের হত্যা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, তোমরা যুদ্ধ করার সময় আল্লাহর নাম নেবে, আল্লাহর ওপর ভরসা করবে এবং আল্লাহর রাসুলের মিল্লাতের (ধর্মনীতি) ওপর অটল থাকবে। অতি বৃদ্ধ, শিশু-কিশোর ও নারীদের হত্যা করবে না।’ (আবু দাউদ: ২৬১৪)

শুধুমাত্র সন্দেহের কারণে কারো ক্ষতি করা যাবে না

যুদ্ধকবলিত এলাকায় কোনো ব্যক্তি যদি ইসলাম গ্রহণ করেছে বলে স্বীকার করে এবং সালাম দেয় তাহলে তাকে এই বলে হত্যা করা যাবে না যে, সে প্রাণের ভয়ে সালাম দিচ্ছে। বরং তাকে নিরাপত্তা দিতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা, যখন তোমরা যখন আল্লাহর পথে (জিহাদের জন্য) সফর করবে তখন যাচাই-বাছাই করে দেখবে। কেউ তোমাদের সালাম দিলে পার্থিব জীবনের উপকরণ লাভের আশায় তাকে বলবে না যে, তুমি মুমিন নও। আল্লাহর কাছে প্রচুর গনিমতের সম্পদ রয়েছে।’ (সুরা নিসা: ৯৪)

অনেক ক্ষেত্রে এমনও হয় যে, কোনো একটা সংবাদ যাচাই না করেই কারো ওপর চড়াও হয়। ফলে নিরপরাধ মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়ে। ইসলামে এটা নিষেধ করা হয়েছে।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে ঈমানদাররা, যখন কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে সংবাদ নিয়ে আসে তখন তোমরা তা ভালোভাবে যাচাই করো, যাতে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়ের ওপর চড়াও না হও, ফলে পরবর্তী সময়ে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য আফসোস করতে হয়।’ (সুরা হুজরাত: ৬)

সম্পদ ধ্বংস ও প্রাণি হত্যা নয়

ইসলাম প্রয়োজনে যুদ্ধের অনুমতি দিলেও সম্পদহানি ও প্রাণী হত্যার অনুমতি দেয় না। মহানবী (স.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহই তাঁর দ্বীনের সাহায্যকারী। সুতরাং তোমরা (যুদ্ধক্ষেত্রে) গনিমতের সম্পদ আত্মসাৎ করো না, প্রতারণা করো না, কাপুরুষিকতা প্রদর্শন করো না, ভূপৃষ্ঠে বিশৃঙ্খল করো না, বৃক্ষরাজি ডুবিয়ে দিয়ো না বা ভস্ম করো না, পশু হত্যা করো না, ফলদ গাছ ধ্বংস করো না এবং আনুগত্যের অঙ্গীকার ভঙ্গ করো না।’ (সুনানুল কুবরা লিল-বাইহাকি: ১৭৯০৪)

লাশের বিকৃতি সাধন করা যাবে না

যুদ্ধের ময়দানে প্রাণহানি এড়িয়ে যাওয়াই ইসলামের নীতি। তারপরও যদি প্রতিপক্ষের কেউ নিহত হয়, তবে ইসলাম লাশের পূর্ণ মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করার নির্দেশ দেয়। লাশ বিকৃত করার মতো অসম্মানজনক কাজ থেকে বিরত রাখার নির্দেশ দেয়।

ধর্মগুরুদের হত্যা করা যাবে না

ধর্মগুরুরা সমাজের নীতি-নৈতিকতা বজায় রাখতে ভূমিকা রাখেন। বহু ক্ষেত্রে তাঁরা যুদ্ধ-বিগ্রহ এড়িয়ে চলেন। ফলে আশ্রম ও উপাসনালয়ে অবস্থানকারী ধর্মগুরু ও সাধকদের ইসলাম হত্যা করতে নিষেধ করে। হাদিসে এসেছে, কোনো বাহিনী প্রেরণের আগে মহানবী (স.) তাদের বলতেন, ‘তোমরা আশ্রমের অধিবাসীদের হত্যা করো না।’ (মুসনাদে আবু ইয়ালা: ২৬৫০)

শত্রুপক্ষ সন্ধির প্রস্তাব করলে করণীয়

শত্রুরা যদি যুদ্ধ না করে সন্ধির প্রস্তাব করে, তাহলে সন্ধির দিকে যাওয়া উত্তম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর তারা যদি সন্ধির দিকে ঝুঁকে পড়ে, তবে তুমিও সে দিকে ঝুঁকে পড়ো এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখো। নিশ্চয় তিনি সব কথা শোনেন, সবকিছু জানেন। (সুরা আনফাল: ৬১)

চুক্তিবদ্ধ বিষয়ে প্রতারণা নিষিদ্ধ

ইসলাম যুদ্ধক্ষেত্রেও প্রতিপক্ষের সঙ্গে প্রতারণা করতে নিষেধ করেছে। বিশেষত যখন উভয়পক্ষ কোনো বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়।

আত্মসমর্পণ করলে করণীয়

যুদ্ধের ময়দানে অনেক সময় প্রতিপক্ষ আত্মসমর্পণ করে এবং অপরপক্ষ তাকে আশ্রয় দানে আশ্বস্ত করে। কাউকে আশ্রয়দানের পর তাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছে ইসলাম। রাসুলুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ব্যক্তির জীবনের নিরাপত্তা দেওয়ার পর তাকে হত্যা করল সে কেয়ামতের দিন বিশ্বাসঘাতকতার ঝাণ্ডা বয়ে বেড়াবে।’ (ইবনে মাজাহ: ২৬৮৮)

বন্দিদের সঙ্গে আচরণ যেমন হবে

ইসলাম শুধু শত্রুপক্ষের বন্দিদের পূর্ণ মানবিক মর্যাদা ও মৌলিক অধিকার প্রদানের নির্দেশ দেয় না; বরং ইসলাম বন্দিদের জন্য অর্থ ব্যয় করাকে মর্যাদাপূর্ণ দান বলে ঘোষণা করেছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আহার্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও তারা অভাবগ্রস্ত, এতিম ও বন্দিকে আহার্য দান করে।’ (সুরা দাহর: ৮)

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!