নিজের কত টাকা থাকলে দিতে হবে কোরবানি

কোরবানি আর্থিক ইবাদত। আল্লাহ তাআলাকে রাজি-সন্তুষ্টি করার জন্য ও ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত পালনের জন্য কোরবানি করা হয়। যারা সামর্থ্যবান, তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব।

তবে আজকে আমাদের আলোচনা- কতটুকু সম্পদ থাকলে কোরবানি ওয়াজিব হবে? হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا হজরত আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে কোরবানি করে না, সে যেন অবশ্যই আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়। (মুসনাদ আহমাদ- ৮২৭৩, ইবনে মাজাহ- ৩১২৩)

জিলহজের প্রথম দশ দিনের আমল

বিস্তারিত পড়ুন

সুতরাং কারো কাছে যদি জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই পরিমাণ স্বর্ণ, রুপা, টাকা অথবা মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত অন্য কোনো সম্পদ যার মূল্য ৯০ হাজার টাকার বেশি তাহলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব।

মৌলিক প্রয়োজন বলতে কি বোঝায়?

মৌলিক প্রয়োজন বলতে ওইসব জিনিসকে বোঝানো হয় যা ছাড়া মানুষের জীবন কষ্টকর হয়ে যায়। যেমন বসবাসের বাড়ি, চলাচলের গাড়ি, উপার্জনের আসবাবপত্র, ব্যবহারের কাপড়-চোপড় এবং কাজের লোক ইত্যাদি। কোনো নারীকে যদি তার স্বামী যথাযথভাবে ভরণপোষণ করে থাকেন আর ওই নারীর মালিকানায় কোনো জমি থাকে তাহলে সেটাও মৌলিক প্রয়োজন অতিরিক্ত হিসেবে গণ্য হবে।
 
কি পরিমাণ ঋণ থাকলে কোরবানি দিতে হয় না? জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কেউ যদি এই পরিমাণ ঋণী হয় যে, ওই ঋণ পরিশোধ করলে তার নেসাব পরিমাণ সম্পদ থেকে কমে যাবে। তাহলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না। এই ধরনের ব্যক্তিবর্গ শরীয়তের দৃষ্টিতে গরিব হিসেবে গণ্য।

বন্য প্রাণী কোরবানি দেওয়া যাবে?

বিস্তারিত পড়ুন

তবে যেসব ব্যবসায়ীরা ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধির জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে থাকেন তারা ওই ঋণ বাদ দিতে পারবেন না। ওই ঋণ থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করতে হবে। পক্ষান্তরে যারা মৌলিক প্রয়োজনের জন্য ঋণ গ্রহণ করে থাকেন তারাই কেবল নেসাবের হিসাব থেকে ঋণ বাদ দিতে পারবেন।
 
কোরবানি এবং জাকাতের নেসাবের মধ্যে পার্থক্য, কোরবানি এবং জাকাতের নেসাবের মধ্যে মৌলিকভাবে দুটি পার্থক্য রয়েছে।

এক. যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য ওই নেসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর বিদ্যমান থাকা  আবশ্যক। পক্ষান্তরে কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য এক বছর বিদ্যমান থাকা আবশ্যক নয়; বরং জিলহজের ১০ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকাই যথেষ্ট।

দুই. জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য স্বর্ণ, রুপা, টাকা-পয়সা এবং ব্যবসার পণ্য হতে হয়। 
 
পক্ষান্তরে কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত সব সম্পদ হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে। যেমন প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি-জামা, গাড়ি-বাড়ি, পোশাক-আশাক, সৌন্দর্য বর্ধনের ফার্নিচার ইত্যাদি। এগুলোর মূল্য যদি ওই নেসাব পরিমাণ হয়ে যায় তাহলে তার ওপর কোরবানি আবশ্যক হয়ে যাবে।

নির্ধারিত দিনে কোরবানি দিতে না পারলে যা করবেন

বিস্তারিত পড়ুন

(তথ্যসূত্র, বাদায়ে সানায়ে ৫/৬৪ মুলতাকাল  আবহুর পৃ ৩৩৪ ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ৫/২৯২ রদ্দুল মুহতার ৬/৩২১ আল ফাতাওয়াল বাযযাযিয়াহ ৬/২৮৭  ফাতাওয়ায়ে ফাকিহুল মিল্লাত ১১/১৮৮-২০০)