মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করে তার ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছেন। সকল বান্দার প্রতিই তার দয়া অফুরন্ত। গুনাহগার বান্দাকে তিনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন।
আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের ভালোবাসেন এবং তাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। কিন্তু কীভাবে বুঝবেন যে আল্লাহ আপনাকে ভালোবাসেন? ইসলামী শরিয়তে এমন কিছু সুস্পষ্ট আলামত বা নিদর্শন রয়েছে, যা দেখে একজন বান্দা আল্লাহর ভালোবাসা অনুভব করতে পারেন।
এই ৪টি আলামত আপনার জীবনে থাকলে বুঝবেন আল্লাহ আপনাকে ভালোবাসেন।
বিপদাপদ ও পরীক্ষার মাধ্যমে পরিশুদ্ধি
আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন, তখন তাকে বিভিন্ন বিপদাপদ ও পরীক্ষার সম্মুখীন করেন। এগুলো শাস্তিস্বরূপ নয়, বরং বান্দাকে পরিশুদ্ধ করার এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধির মাধ্যম।
যেমন, হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, ‘যখন আমি আমার বান্দাদের কাউকে ভালোবাসি, তখন তাকে দুনিয়ার বিপদাপদ ও পরীক্ষার মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করি, যেমন স্বর্ণকে আগুন দিয়ে পরিশুদ্ধ করা হয়।’
এই পরীক্ষাগুলো ধৈর্য ও আল্লাহর ওপর ভরসা শেখায় এবং বান্দাকে আল্লাহর আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে।
নেক আমলের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি
আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন, তাকে নেক আমল করার তৌফিক দান করেন। নামাজ, রোজা, যাকাত, দান-সদকা, জিকির-আজকার এবং অন্যান্য ভালো কাজের প্রতি তার আগ্রহ বেড়ে যায়। গুনাহ থেকে দূরে থাকার প্রবণতা তৈরি হয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে এক হাত এগিয়ে যাই। যে আমার দিকে এক হাত এগিয়ে আসে, আমি তার দিকে এক বাহু এগিয়ে যাই।
আর যে আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।’
দ্বীনের গভীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা লাভ
আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন, তখন তাকে দ্বীনের জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করেন। সে দুনিয়ার ভোগ-বিলাসিতার চেয়ে আখেরাতের বিষয়ে বেশি মনোযোগী হয়। ইসলামী জ্ঞান অর্জনের প্রতি তার প্রবল আকাঙ্ক্ষা থাকে এবং সে অনুযায়ী আমল করতে চেষ্টা করে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করেন।’ এই জ্ঞান তাকে সঠিক পথ দেখায় এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়তা করে।
মানুষের ভালোবাসা ও গ্রহণযোগ্যতা
আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন, দুনিয়াতেও তার প্রতি মানুষের মনে ভালোবাসা তৈরি করে দেন। সমাজে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে এবং মানুষ তাকে শ্রদ্ধা করে। নেককার ও ভালো মানুষেরা তাকে পছন্দ করে।
হাদিসে এসেছে, যখন আল্লাহ কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন, তখন জিবরাঈলকে ডাকেন এবং বলেন, ‘আমি অমুককে ভালোবাসি, সুতরাং তুমিও তাকে ভালোবাসো’'
তখন জিবরাঈলও তাকে ভালোবাসেন এবং আকাশবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে, ‘আল্লাহ অমুককে ভালোবাসেন, সুতরাং তোমরাও তাকে ভালোবাসো।’ এরপর পৃথিবীতেও তার প্রতি মানুষের ভালোবাসা তৈরি হয়।
এই আলামতগুলো প্রতিটি মুসলিমের জন্য আত্মবিশ্লেষণের সুযোগ করে দেয়। যদি আপনার জীবনে এই নিদর্শনগুলো বিদ্যমান থাকে, তবে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন এবং তার দেখানো পথে অবিচল থাকুন।
আর যদি না থাকে, তবে আল্লাহর কাছে তৌফিক কামনা করুন এবং নেক আমলের মাধ্যমে তার নৈকট্য লাভের চেষ্টা করুন।
আপনার মতামত লিখুন :