পাপের ভারে জর্জরিত প্রতিটি হৃদয়ের একান্ত প্রার্থনা আল্লাহ যেন ক্ষমা করেন, মাফ করে দেন সব ভুল ও গাফিলতি। জীবন যত এগোয়, পেছনে জমতে থাকে অনুশোচনার দীর্ঘ তালিকা। তবে জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যেগুলো আমাদের পাপ-পঙ্কিলতার মাঝে নতুনভাবে ভাবতে শেখায়।
আমরা কোথায় যাচ্ছি, কাদের অনুসরণ করছি, আর কতটুকু প্রস্তুত আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর জন্য? আশুরা তেমনই একটি মুহূর্ত, একটি দিন। যে দিনে রোজা রাখা মানে কেবল একটি সুন্নত পালনের বিষয় নয়, বরং একটি বছরের সব গুনাহ মাফের সুযোগ।
নবিজি (সা.) নিজে এই রোজা রেখেছেন, সাহাবিদেরও নির্দেশ দিয়েছেন রাখতে। কারণ, এই দিনটিতে আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে তাঁর প্রিয় বান্দাদের মুক্তি দিয়েছেন। আর আমাদের দিয়েছেন ফিরে আসার সুযোগ।
তাই আশুরা কেবল ইতিহাসের নয় এই দিনটি একজন মুসলমানের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা ও কৃতজ্ঞতার চোখে তাকানোর এক বিরল সুযোগ।
আশুরার ঐতিহাসিক তাৎপর্য
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হিজরতের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় গিয়ে দেখেন, ইহুদিরা ১০ মহররম রোজা রাখছে। জিজ্ঞেস করলে তারা জানায়, এই দিনে আল্লাহ মুসা (আ.) ও বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন।
তখন নবিজি (সা.) বললেন, “আমি মুসার (আ.) চেয়ে অধিক হকদার।” তিনি নিজে রোজা রাখলেন এবং সাহাবিদেরও রাখার নির্দেশ দিলেন। (সহিহ মুসলিম: ২৫৪৮)
রাসুল (সা.) যে রোজাগুলো কখনো ছাড়তেন না
উম্মুল মুমিনীন হাফসা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) চারটি আমল কোনো দিনই পরিত্যাগ করতেন না—
১) আশুরার রোজা
২) জিলহজের প্রথম দশ দিনের রোজা
৩) প্রতি মাসে তিন দিন রোজা
৪) ফজরের আগে দুই রাকাত নামাজ
(সুনানে নাসাঈ: ২৪১৬)
এক বছরের গুনাহ মাফের সুসংবাদ
আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, এ রোজার কারণে আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’
(সহিহ মুসলিম: ২৬১৭)
আরেক হাদিসে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রমজান ও আশুরার রোজার মতো অন্য কোনো রোজাকে রাসুলুল্লাহ (সা.) এত গুরুত্ব দেননি।’ (সহিহ বুখারি: ২০০৬)
কেন দুই দিন রোজা রাখা উত্তম?
ইহুদিরা এক দিন মাত্র ১০ মহররম রোজা রাখত। রাসুল (সা.) চাইলেন মুসলমানদের রোজা যেন তাদের সঙ্গে পুরোপুরি না মিলে যায়। তাই তিনি নির্দেশ দেন, ‘তোমরা আশুরার দিন রোজা রাখো এবং তাতে ইহুদিদের বিরোধিতা করো আশুরার আগে এক দিন বা পরে এক দিন রোজা রাখো।’ (মুসনাদে আহমদ: ২১৫৫)
২০২৫ সালে কোন দিন রোজা রাখবেন?
বাংলাদেশে ১৪৪৭ হিজরির মহররম মাস শুরু হয়েছে ২০২৫ সালের ২৭ জুন শুক্রবারে। সে হিসেবে ১০ মহররম, অর্থাৎ আশুরা পড়েছে ৬ জুলাই, রোববারে।
যারা সুন্নতের অনুসরণে দুই দিন রোজা রাখতে চান, তারা রাখতে পারেন:
৫ ও ৬ জুলাই (শনিবার ও রোববার)। অথবা ৬ ও ৭ জুলাই (রোববার ও সোমবার)
আপনার মতামত লিখুন :