শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫, ১১:৪০ এএম

যেভাবে জীবনযাপন করতেন নবীজি (সা.)

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫, ১১:৪০ এএম

মক্কা শরীফ। ছবি- সংগৃহীত

মক্কা শরীফ। ছবি- সংগৃহীত

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন ছিল অনাড়ম্বর, সাদাসিধে ও দুনিয়াবিমুখ। তিনি কখনো বিলাসিতার দিকে ঝুঁকেননি। বরং দরিদ্রতা ও সাধাসিধে জীবনযাপনকেই পছন্দ করতেন এবং তা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করতেন। দুনিয়ার জৌলুস নয়, বরং আখিরাতের শান্তিই ছিল তার কাম্য। তিনি উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন কীভাবে দীনদারি, পরকালের প্রতি সচেতনতা এবং দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে জীবনযাপন করতে হয়।

হজরত আনাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার দোয়া করে বলেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে দরিদ্র অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখো, দরিদ্র থাকা অবস্থায় মৃত্যু দিও এবং কিয়ামতের দিন দরিদ্রদের দলভুক্ত করে হাশর করো।’

এ কথা শুনে হজরত আয়েশা (রাযি.) জিজ্ঞেস করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এমন দোয়া করছেন কেন?’ তিনি উত্তরে বলেন, ‘হে আয়েশা! দরিদ্ররা ধনীদের আগে, চল্লিশ বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ এরপর তিনি আরও বলেন, ‘হে আয়েশা! কোনো প্রার্থনাকারী দরিদ্রকে ফিরিয়ে দিও না। যদি তোমার কিছু না থাকে, অন্তত একটি খেজুরের টুকরো হলেও তাকে দিও। দরিদ্রদের ভালোবাসো এবং তাদেরকে তোমার সান্নিধ্যে রাখো, তাহলে কেয়ামতের দিন আল্লাহও তোমাকে তার সান্নিধ্যে রাখবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ২৩৫২)

হজরত আয়েশা (রাযি.) রাসুল (সা.)-এর জীবনের দারিদ্র্যের চিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশায় আমাদের এমন সময়ও কেটেছে, যখন আমরা কয়েকদিন একটানা শুধু পানি ও খেজুর খেয়ে দিন কাটিয়েছি। এমনকি, যেদিন তার মৃত্যু হয় সেদিনও ঘরে পানি ও খেজুর ছাড়া কিছুই ছিল না।’ (সহিহ বোখারি)

তবে সাদাসিধে জীবনযাপন মানে এই নয় যে, তিনি কোনো প্রকার প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবহার করতেন না। বরং তিনি প্রয়োজন অনুযায়ী সাধারণ মানের আসবাব ব্যবহার করতেন। তিনি মদিনায় হিজরত করার পর প্রথমেই মসজিদে নববি নির্মাণ করেন। মসজিদের পাশের জমির মালিক ছিলেন সাহাবি হারিস ইবনে নোমান (রাযি.)। তিনি নিজের বাড়ি নবীজির (সা.) প্রয়োজনে ছেড়ে দেন। যদিও উপহারস্বরূপ ছেড়ে দিয়েছিলেন, তবুও রাসুল (সা.) তাকে উপযুক্ত মূল্য পরিশোধ করেন। এই জায়গাতেই নবীজি (সা.) ও তার স্ত্রীদের জন্য মোট ৯টি ঘর নির্মাণ করা হয়।

এসব ঘরের নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিল কাঁচা ইট, খেজুরগাছের ডাল ও শক্ত মাটি। চারটি ঘরের সামনে পাথরের দেয়াল এবং অন্যগুলোতে মাটির প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছিল, যাতে নিরাপত্তা বজায় থাকে। প্রতিটি ঘরে দরজা ও জানালা ছিল। আয়েশা (রাযি.)-এর ঘরে এক পাল্লার কাঠের দরজা ছিল এবং তার সামনে পর্দা ঝোলানো থাকত। কোনো কোনো ঘরের সামনে সংযুক্ত ছোট কক্ষও ছিল, যেগুলোর দরজায় পর্দা ঝুলানো থাকত। রাসুল (সা.)-এর ঘরে সাধারণ পশমের কাপড় দিয়ে তৈরি পর্দা ব্যবহৃত হতো।

হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিছানা ছিল চামড়ার তৈরি, যার ভেতরে খেজুরগাছের ছাল ভরা থাকত। (সহিহ বোখারি, হাদিস: ৬৪৫৬) তার ব্যবহৃত বালিশও ছিল একই রকম চামড়ার তৈরি, যার ভেতরেও খেজুর ছাল থাকত। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪১৪৬) এগুলো সবই সাধারণ ও প্রয়োজনভিত্তিক ব্যবহারযোগ্য বস্তু ছিল।

হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাযি.)-এর এক বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাদামাটা জীবনের একটি স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে একটি চাটাইয়ের ওপর শুয়ে থাকতে দেখি, যার নিচে কিছুই ছিল না। তার মাথার নিচে ছিল খেজুর ছালভর্তি চামড়ার বালিশ। আমি তার শরীরে চাটাইয়ের দাগ দেখে কেঁদে ফেলি।’ রাসুল (সা.) তখন জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কাঁদছ কেন?’ উমর (রাযি.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কায়সার ও কিসরা ভোগ-বিলাসে ডুবে আছে, অথচ আপনি আল্লাহর রাসুল হয়ে এত সাধারণ জীবনযাপন করছেন!’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তাদের জন্য দুনিয়া আর আমাদের জন্য আখিরাত?’ (সহিহ বোখারি, হাদিস: ৪৯১৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন আমাদের জন্য এক অনুপম আদর্শ। তিনি দুনিয়াবিমুখ, সংযমী ও আত্মনির্ভর জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, প্রকৃত প্রশান্তি আসে আখিরাতমুখী মনোভাব, দানশীলতা ও সাধারণ জীবনের মাধ্যমে। তার সাদাসিধে জীবন কেবল ইতিহাস নয়, বরং প্রতিটি মুসলমানের জীবনে বাস্তবায়নের মতো একটি চিরন্তন আদর্শ।

Link copied!