ইসলামে ‘সালাতুত তাসবিহ’ একটি ফজিলতপূর্ণ নামাজ। এর প্রতি মুসলিম উম্মাহর গুরুত্ব অপরিসীম। নবী করিম (সা.) এ নামাজ যত্ন সহকারে আদায় করতেন এবং সাহাবিদেরকেও পড়ার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দিতেন।
হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, এ নামাজ সম্ভব হলে প্রতিদিন পড়া উত্তম। তবে প্রতিদিন সম্ভব না হলে প্রতি শুক্রবার বা প্রতি মাসে একবার কিংবা প্রতি বছরে একবার পড়া উচিত। আর তাও যদি সম্ভব না হয় তাহলে জীবনে কমপক্ষে একবার হলেও পড়বে। সালাতুত তাসবিহ আদায়কারী মহাপুরস্কারপ্রাপ্ত হবে এবং তার সমুদয় গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
সালাতুত তাসবিহের নিয়ম:
সালাতুত তাসবিহের নামাজ চার রাকাত। স্বাভাবিকভাবে নিয়ত করলেই হবে। প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহার পর যেকোনো সুরা পড়া যাবে। এ নামাজের বিশেষত্ব হলো, নির্দিষ্ট একটি তাসবিহ, যা প্রতি রাকাতে ৭৫ বার পড়তে হয়।
তাসবিহটি হলো- বাংলা উচ্চারণ: ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার’।
বাংলা অর্থ: মহাপবিত্র আল্লাহ। সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আল্লাহ সবার চেয়ে বড়।
প্রথম রাকাতে সানা পড়ার পর সুরা ফাতিহার আগে এ তাসবিহ ১৫ বার পড়তে হবে। তারপর সুরা ফাতিহা ও কেরাত শেষে রুকুতে যাওয়ার আগে ১০ বার পড়তে হবে। রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবিহ শেষ করে ১০ বার পড়তে হবে। তারপর রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর পর ১০ বার পড়তে হবে। পরে সিজদায় গিয়ে প্রথম সিজদার তাসবিহ শেষ করে ১০ বার পড়তে হবে। সিজদা থেকে উঠে আবার ১০ বার পড়ে এরপর দ্বিতীয় সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবিহ শেষ করে আবার ১০ বার পড়তে হবে। এভাবে প্রত্যেক রাকাতে মোট ৭৫ বার এ তাসবিহটি পড়তে হবে। চার রাকাত নামাজে তাসবিহটি ৩০০ বার পড়া হবে। (তিরমিজি, ৪৮৩)
তাসবিহ গণনায় সাবধানতা:
অনেকেই তাসবিহের হিসাব রাখতে আঙুলের গিঁট গোনেন; এটি ঠিক নয়। এ নামাজে তাসবিহ গণনার ক্ষেত্রে খুব মনোযোগী ও সতর্ক থাকতে হবে। মুখে অথবা হাতের আঙুল দ্বারা সরাসরি গণনা করা যাবে না। তবে আঙুল বন্ধ করে গণনা করা জায়েজ থাকলেও তা মাকরুহ। তাই গণনার উত্তম পদ্ধতি হলো, হাতের আঙুলগুলো স্বাভাবিক রাখা এবং এক তাসবিহ পড়া হলে এক আঙুল চাপ দেওয়া। কোনো ক্ষেত্রে যদি তাসবিহে ভুল হয়ে যায় বা কম হয়ে যায়, তাহলে তা অন্য রোকনে পূর্ণ করে নিলেও হবে। কিন্তু লক্ষ রাখতে হবে তা যেন রুকু থেকে উঠে এবং দুই সিজদার মাঝখানে না হয়। (ফাতাওয়া শামি; ইলমুল ফিকহ, ২/৫০)
সালাতুত তাসবিহের ফজিলত :
আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক দিন তাঁর চাচা আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা.)-কে বললেন, ‘হে আমার সম্মানিত চাচা, আমি কি আপনার খেদমতে একটি মূল্যবান হাদিয়া পেশ করব? এবং আপনার ১০টি কাজ ও ১০টি খেদমত করে দেব? অর্থাৎ আপনাকে এমন একটি কাজ বলে দেব, যা দ্বারা ১০টি উপকার হবে। এটি এমন একটি আমল যখন আপনি তা করবেন, তখন আল্লাহতায়ালা আপনার যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
অতীত ও ভবিষ্যতের নতুন-পুরোনো, ইচ্ছাকৃত-অনিচ্ছাকৃত, জানা-অজানা, ছোট-বড় যাবতীয় গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। ওই আমলটি হলো সালাতুত তাসবিহ। হে চাচা, যদি সম্ভব হয় এই নামাজ প্রতিদিন একবার পড়বেন। তাও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে প্রতি শুক্রবার পড়বেন। যদি তাও সম্ভব না হয় তাহলে প্রতি মাসে একবার, আর যদি তাও সম্ভব না হয় তবে প্রতি বছর একবার পড়বেন। আর এটাও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে জীবনে একবার হলেও সালাতুত তাসবিহ আদায় করবেন।’ (আবু দাউদ, ১২৯৯)
সালাতুত তাসবিহ নামাজ পড়তে৩০ থেকে ৪০ মিনিট লাগে। এটুকু সময়ের বদৌলতে আমরা জীবনের সব গুনাহের ক্ষমা পেতে পারি। হতে পারি আল্লাহতায়ালার প্রিয়জন।
আপনার মতামত লিখুন :