কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কোরবানির গুরুত্ব প্রসঙ্গে মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানি নির্ধারণ করেছি, যাতে তারা হালাল পশু জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’ (সূরা হজ, আয়াত : ৩৪)
কেউ একা একটি পশু কোরবানি করে। আবার কেউ কেউ শরিকে বা অংশীদারদের সঙ্গে ভাগে কোরবানি করেন। এটা সাধারণত সামর্থ্যের কারণে হয়ে থাকে। আবার কেউ একা করার সামর্থ্য সত্ত্বেও অন্য কোনো অংশীদারে সঙ্গে কোরবানি করে থাকেন। নিজে একা কোরবানি করলে, যতটা সুবিধা অংশদারীর ভিত্তিতে কোরবানি করলে নতুন কিছু বিষয় এসে যায়। যেগুলো জেনে রাখা খুবই জরুরি।
কোন পশুতে কতজন অংশ নিতে পারে?
প্রথমত কোরবানির পশুতে প্রত্যেক অংশীদারের অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ অন্যের অংশ থেকে কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরিকের কোরবানি শুদ্ধ হবে না। (বাদায়েউস সানায়ি : ৪/২০৭)
উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কোরবানি করা জায়েজ। (মুসলিম, হাদিস: ১৩১৮; বাদায়েউস সানায়ি: ৪/২০৭)
কোনো অংশীদারের নিয়ত গলদ হলে
অংশীদারদের কেউ যদি আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কোরবানি না করে, শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কোরবানি করে; তাহলে তার কোরবানি শুদ্ধ হবে না। এমনকি তাকে কেউ অংশীদার বানালে, তাদের (অংশীদারদের) কোরবানিও শুদ্ধ হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে অংশীদার নির্বাচন করা জরুরি। (বাদায়েউস সানায়ি : ৪/২০৮; কাজিখান : ৩/৩৪৯)
কোরবানির পশুতে আকিকা করা যায়?
কোরবানির গরু, মহিষ ও উটে আকিকার নিয়তে অংশীদার হওয়া যায়। এতে কোরবানি ও আকিকা দুটোই শুদ্ধ হবে। ছেলের জন্য দুই অংশ আর মেয়ের জন্য এক অংশ দিতে হবে।
শৈশবে আকিকা করা না হলে বড় হওয়ার পরও আকিকা করা যাবে। যার আকিকা সে নিজে এবং তার মা-বাবাও আকীকার গোশত খেতে পারবে। (ইলাউস সুনান: ১৭/১২৬)
ফাতাওয়া শামীসহ ফিকহ-ফাতাওয়ার কিতাবাদিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কোরবানির সঙ্গে আকীকা সহীহ। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬; হাশিয়াতুত তহতাভি আলাদ্দুর: ৪/১১৬)
হারাম অর্থের পশুতে কোরবানি শুদ্ধ হয় না
কোরবানি করতে হবে সম্পূর্ণ হালাল সম্পদ থেকে। হারাম টাকা দ্বারা কোরবানি করা শুদ্ধ নয় এবং এক্ষেত্রে অন্য অংশীদারদের কোরবানিও শুদ্ধ হবে না।
কেউ যদি গরু, মহিষ বা উট একা কোরবানি দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয়, তাহলে তার জন্য এ পশুতে অন্যকে অংশীদার করা জায়েয। তবে এতে কাউকে শরিক না করে একা কোরবানি করাই শ্রেয়। শরিক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম।
আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়, যার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব নয়, তাহলে যেহেতু কোরবানির নিয়তে পশুটি ক্রয় করার মাধ্যমে লোকটি তার পুরোটাই আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছে, তাই তার জন্য এ পশুতে অন্যকে শরিক করা জায়েজ নয়।
যদি শরিক করে, তবে ওই টাকা সদকা করে দেওয়া জরুরি হবে। কোরবানির পশুতে কাউকে শরিক করতে চাইলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে নিতে হবে। (ফাতাওয়া কাজিখান: ৩/৩৫০-৩৫১; বাদায়িউস সানায়ি: ৪/২১০)
আপনার মতামত লিখুন :