ঢাকা সোমবার, ০৯ জুন, ২০২৫

মুরতাদের বিষয়ে আল্লাহর ৪ হুঁশিয়ারি

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২৫, ০৪:৫৬ পিএম
পবিত্র কোরআনের প্রতীকী ছবি।

ইসলামে ‘মুরতাদ’ বা ধর্মত্যাগ একটি ভয়াবহ গুনাহ। যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে, সে সরাসরি আল্লাহর আজাবের ঝুঁকিতে পড়ে যায়। কোরআনুল কারিমে ও হাদিসে এমন ব্যক্তিদের সম্পর্কে বারবার কঠোর সতর্কতা উচ্চারিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা মুরতাদদের প্রতি চারটি গুরুত্বপূর্ণ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যা প্রতিটি মুসলমানের জানা অত্যন্ত জরুরি। কারণ ইমান হারিয়ে ফেলা মানে শুধু দুনিয়ার নয়, আখিরাতের সফলতাও চিরতরে হারিয়ে ফেলা।

১. ইমান হারালে সব আমল বরবাদ

আল্লাহ বলেন- ‘...আর যে কেউ ইমানের পর কুফরি করে, তার সব আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সূরা আল-মায়িদা: ৫)

এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, কেউ যদি ইসলাম গ্রহণ করার পর তা ত্যাগ করে, তার আগে করা সব নেক কাজ অর্থহীন হয়ে যায়। অর্থাৎ নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, দান, এমনকি শাহাদাত পর্যন্ত —সব কিছুই হারাম হয়ে যায়, যদি কেউ ইসলাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।

এই হুঁশিয়ারি মুরতাদদের জন্য ভয়াবহ পরিণতির পূর্বাভাস দেয়। শুধু দুনিয়ার সম্মান নয়, আখিরাতেও তার জন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।

২. হেদায়াতের দরজা বন্ধ হয়ে যায়

আল্লাহ বলেন- ‘যারা ঈমানের পর কুফরি করে, পরবর্তীকালে তাদের কুফরি আরও বাড়তে থাকে, তাদের তওবা কখনো কবুল করা হবে না। আর তারাই হলো পথভ্রষ্ট।’ (সূরা আলে ইমরান: ৯০)

এই আয়াতে দ্বিতীয়বার হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। ইসলাম ত্যাগ করার পর কেউ যদি আবারও গোমরাহিতে ডুবে যায়, তার হেদায়াতের দরজা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ কেউ যদি ইসলাম ত্যাগ করে এবং তা নিজের অহংকার বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করে, তাহলে তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওবার দরজাও একসময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

হেদায়াত বা আল্লাহর পথের আলো একমাত্র তাঁর অনুমতিতে লাভ হয়। ইমান ত্যাগ করলে সেই আলো থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভয়াবহতা কল্পনাও করা যায় না।

৩. দুনিয়া ও আখিরাতে লাঞ্ছনা ও আজাব

আল্লাহ বলেন- ‘যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণের পর তা প্রত্যাখ্যান করে (মুরতাদ হয়), আল্লাহর গজব তার ওপর অবধারিত। সে ব্যক্তি দুনিয়াতেও লাঞ্ছিত হবে এবং আখিরাতে তাকে ভয়াবহ শাস্তি ভোগ করতে হবে।’ (সূরা আন-নাহল: ১০৬)

এখানে বলা হয়েছে, মুরতাদরা শুধু আখিরাতে নয়, দুনিয়াতেও তারা অপমানিত ও হতভাগা হবে। তারা তাদের ইজ্জত হারাবে, সমাজে নিন্দিত হবে, এমনকি মানসিক শান্তিও হারাবে। ইসলাম ত্যাগ করা মানে শুধু একটি ধর্ম ত্যাগ করা নয়, এটি আল্লাহর সঙ্গে বিদ্রোহ ঘোষণা করার শামিল।

ইতিহাসে দেখা যায়, যারা ইসলাম ত্যাগ করেছে, তাদের একাংশ পরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে, অনেকে চরম হতাশায় ভুগেছে। কারণ ইসলাম হচ্ছে হৃদয়ের প্রশান্তি ও আলোর উৎস। এটি পরিত্যাগ করা মানে অন্ধকারে ঝাঁপ দেওয়া।

৪. চিরস্থায়ী জাহান্নামের ঘোষণা

আল্লাহ বলেন- ‘যারা ইমানের পর কুফরি করে এবং সেই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ, ফেরেশতা ও সমগ্র মানবজাতির অভিশাপ তাদের ওপর। তারা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। তাদের শাস্তি হালকা করা হবে না এবং তাদের কোনো সাহায্যকারীও থাকবে না।’ (সূরা আল-বাকারা: ২১৭)

এটি মুরতাদের বিরুদ্ধে সর্বশেষ ও সবচেয়ে ভয়াবহ হুঁশিয়ারি। যদি কেউ ইমান ত্যাগ করে এবং সেই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তার জন্য চিরস্থায়ী জাহান্নাম নির্ধারিত। এদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ তো আছেই, এমনকি ফেরেশতা ও মানবজাতির অভিশাপও তাদের ওপর পড়ে।

চিরস্থায়ী জাহান্নাম মানে হচ্ছে মুক্তির কোনো পথ নেই, আর কখনো আলো দেখা যাবে না, শুধু নিরবচ্ছিন্ন শাস্তি ও গ্লানি।

মুরতাদ হওয়ার প্রবণতা

বর্তমান যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তাধারা এবং ইসলামের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচারের ফলে অনেক তরুণ-তরুণী বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে। এক শ্রেণির মানুষ ধর্মকে শুধু ব্যক্তিগত ব্যাপার হিসেবে দেখাতে চায়। আবার কেউ কেউ আধুনিকতা বা যুক্তির নামে ইমান থেকে বিচ্যুত হচ্ছে।

মুরতাদ হওয়া সবসময় সরাসরি ‘আমি ইসলাম ছাড়ছি’ বলার মাধ্যমে হয় না। বরং কখনো আল্লাহর কোনো নির্দেশ অস্বীকার করা, রাসুল (সা.)-কে অসম্মান করা, ইসলামি বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করাও ইমানহীনতার দিকে ধাবিত করে।

মুরতাদের বিষয়ে ইসলামী শাসনব্যবস্থা

হাদিস শরিফে স্পষ্টভাবে এসেছে- ‘যে ব্যক্তি তার দ্বীন পরিবর্তন করে (মুরতাদ হয়), তাকে হত্যা করো।’ (সহীহ বুখারি: ৩০১৭)

ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় ধর্মত্যাগ একটি বড় রাষ্ট্রীয় অপরাধ, যেটি শুধু আদালতের মাধ্যমে বিচারযোগ্য। তবে এককভাবে কেউ কখনো বিচার করতে পারে না। উদ্দেশ্য কখনোই শাস্তি নয়, বরং ইসলামের পবিত্রতা রক্ষা ও সমাজে ফিতনা ঠেকানো।

মুসলমানের করণীয়

মুরতাদ হওয়ার ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে প্রতিটি মুসলমানের উচিত নিজের ঈমান সম্পর্কে সচেতন থাকা; দ্বীনের মৌলিক জ্ঞান অর্জন করা; কুফরি বা শিরকি কথা বা কাজ থেকে দূরে থাকা; সন্দেহজনক চিন্তা-ভাবনা বা প্ররোচনায় পা না দেওয়া; প্রতিদিন দোয়া করা—‘হে আল্লাহ! আমাদের অন্তরকে তোমার দ্বীনের ওপর অবিচল রাখো।’

মুরতাদ হওয়া শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, এটি ইমান হারানোর মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের ধ্বংস ডেকে আনে। আল্লাহর পক্ষ থেকে চারটি হুঁশিয়ারি আমাদের সামনে রেখেছেন—আমল বরবাদ, হেদায়াতের দরজা বন্ধ, দুনিয়া ও আখিরাতে লাঞ্ছনা এবং চিরস্থায়ী জাহান্নামের ভয়াবহতা। এসব হুঁশিয়ারি মুসলমানদের জন্য একটি সতর্কবার্তা, যাতে তারা ইমানকে জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ মনে করে এবং তা রক্ষা করতে সচেষ্ট হয়।