অনলাইন গেমিংয়ের জনপ্রিয়তায় শীর্ষে থাকা ‘ফ্রি ফায়ার’ ও ‘পাবজি’ নিয়ে তরুণদের উন্মাদনা কমেনি। তবে ইসলামি শরীয়াহ অনুযায়ী এসব গেম খেলা যেমন নিরুৎসাহিত, তেমনি এর অ্যাকাউন্ট বিক্রি করে উপার্জন করাও বৈধ নয়। আলেমদের মতে, এ ধরনের গেম সাধারণত সহিংসতা, অশ্লীলতা এবং সময় অপচয়ে প্ররোচিত করে, যা একজন মুসলমানকে আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। ফলে খেলা ছেড়ে দেওয়ার পরও অ্যাকাউন্ট বিক্রি শরীয়াহসম্মত নয়।
ইসলামি ফিকহের নীতিতে স্পষ্টভাবে বলা আছে, যে জিনিস নিজেই হারাম, তার ক্রয়-বিক্রয়ও হারাম।
সহিহ মুসলিমে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসে এসেছে, ‘إِنَّ اللَّهَ إِذَا حَرَّمَ شَيْئًا حَرَّمَ ثَمَنَهُ’ অর্থাৎ ‘আল্লাহ যখন কোনো জিনিস হারাম করেছেন, তখন তার মূল্যও হারাম করেছেন’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৫৭৯)।
এ নীতির আলোকে, এমন কোনো গেম যা নৈতিক অবক্ষয় ঘটায় বা মানুষের সময় ও মনোযোগ নষ্ট করে, তার অ্যাকাউন্ট বিক্রি করাও নিষিদ্ধ।
আল্লাহ তাআলা সুরা লুকমানের ৬ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا ۚ أُو۟لَٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌۭ مُّهِينٌ’ অর্থাৎ ‘মানুষের মধ্যে এমনও কেউ আছে, যারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করার জন্য অবান্তর কথাবার্তা ক্রয় করে এবং সেটাকে ঠাট্টা-বিদ্রূপে পরিণত করে। তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি’ (সূরা লুকমান, আয়াত ৬)।
তাফসিরে ইবনে কাসির (খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৯৬)-এ বলা হয়, এখানে ‘লাহওয়াল হাদীস’ বলতে গান-বাজনা, মিথ্যা গল্প এবং এমন সকল বিনোদন বোঝানো হয়েছে যা মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। আধুনিক অনেক সহিংস ভিডিও গেমও এর অন্তর্ভুক্ত।
ফিকহগ্রন্থ বাদায়েউস সানায়ে (৫/১৪৪), আল বাহরুর রায়েক (৫/২৭৯) এবং ফাতাওয়া হিন্দিয়া (৩/১১৬)-তেও একই নীতি পাওয়া যায়- নিষিদ্ধ কাজে ব্যবহৃত কোনো জিনিসের লেনদেন বৈধ নয়।
ফলে, কেউ যদি এসব গেম খেলা বন্ধও করে দেন, তবু তার অ্যাকাউন্ট বিক্রি ইসলামি শরীয়াহ অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এতে এমন কাজে সহযোগিতা করা হয়, যা অন্যকে অনর্থক কাজে জড়িয়ে দেয়।
ইসলামি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন মুসলমানের জন্য উত্তম পথ হলো এমন কাজে সময়, অর্থ ও মনোযোগ বিনিয়োগ করা যা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। হারাম উপার্জনের পথ থেকে দূরে থাকা শুধু ব্যক্তিগতভাবে নয়, সামগ্রিক সমাজের জন্যও উপকারী।
তাই গেম অ্যাকাউন্ট বিক্রির মাধ্যমে উপার্জন না করে হালাল উপায়ে আয়ের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আলেমরা।
আপনার মতামত লিখুন :