ভেনেজুয়েলা উপকূলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি দেশটিতে সরকার পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধীদলীয় নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো। চলতি বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত এই রাজনীতিক জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে সরাতে সহায়তা করলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপকেও স্বাগত জানাবেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাচাদো এই কথা বলেছেন।
তিনি এমন এক সময়ে এই অবস্থান ব্যক্ত করলেন, যখন কোনো প্রমাণ ছাড়াই ওয়াশিংটন মাদুরোর বিরুদ্ধে মাদকচক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছে। তাঁকে বলা হচ্ছে ‘নার্কোটেররিস্ট’ বা মাদক-সন্ত্রাসী। চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পশ্চিম ক্যারিবীয় সাগরে এক নৌবহর মোতায়েন করেন। সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী ভেনেজুয়েলার উপকূলে কথিত মাদকবাহী জাহাজে হামলা চালিয়ে আসছে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ওয়াশিংটন ওই এলাকায় নৌবাহিনীর উপস্থিতি আরও বাড়াচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই অভিযানের লক্ষ্য মাদকবিরোধী অভিযানের বাইরেও বিস্তৃত হতে পারে। যদিও ট্রাম্প বলেছেন, ভেনেজুয়েলার ভেতরে সরাসরি হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই, তবু তিনি সম্ভাব্য টার্গেটের তালিকা পর্যালোচনা করেছেন বলে জানা গেছে।
ব্লুমবার্গের দ্য মিশাল হোসেন শোতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাচাদোকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি কি ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপকে সমর্থন করেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, এখন যে উত্তেজনা তৈরি হচ্ছে, সেটাই একমাত্র উপায় মাদুরোকে বুঝিয়ে দেওয়ার যে, তার এখন চলে যাওয়ার সময় এসেছে।’
মাচাদো দাবি করেন, মাদুরো গত বছরের নির্বাচনে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছেন। সেই নির্বাচনে মাচাদো নিজে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাননি। তিনি আরও বলেন, ওই নির্বাচনে বিরোধীদলীয় প্রার্থী এডমুন্ডো গনসালেজ উররুতিয়া জয়ী হয়েছিলেন। মাচাদোর ভাষায়, মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরানো ‘প্রচলিত অর্থে সরকার পরিবর্তন নয়’, কারণ ‘তিনি বৈধ প্রেসিডেন্ট নন, বরং এক মাদক-সন্ত্রাসী কাঠামোর প্রধান।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘এটা কোনো রেজিম পরিবর্তন নয়, এটা ভেনেজুয়েলার জনগণের ইচ্ছা কার্যকর করার প্রক্রিয়া।’
অন্যদিকে মাদুরো অভিযোগ করেছেন, মাচাদো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে ‘ফ্যাসিবাদী’ সরকারবিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা করছেন। তাঁর মতে, মাচাদো আসলে ওয়াশিংটনের হয়ে কাজ করছেন এবং ভেনেজুয়েলায় হস্তক্ষেপের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছেন। দীর্ঘদিন ধরেই মাচাদোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ২০০৫ সালে তিনি তখনকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে সাক্ষাৎ করেছিলেন।
মাচাদোকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, মাদুরোকে সরাতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি কি একমাত্র পথ, তিনি বলেন, ‘শুধু হুমকিটাই যথেষ্ট হতে পারে। একটি বিশ্বাসযোগ্য হুমকি থাকা ছিল একেবারে অপরিহার্য।’
তিনি আরও দাবি করেন, ভেনেজুয়েলার বিরোধী শিবির ‘সরকার পরিচালনার জন্য প্রস্তুত।’ তাদের পাশে রয়েছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর বড় অংশ। মাচাদোর ভাষায়, ‘তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি এই পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত এবং পরিস্থিতি শুরু হলেই তারা শৃঙ্খলাপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে অংশ নেবে।’
মাদুরো যুক্তরাষ্ট্রের মাদক পাচারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, ট্রাম্প ‘এক নতুন অনন্ত যুদ্ধ তৈরি করছেন।’ কারাকাস যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানকে দেশটির সার্বভৌমত্বের ওপর হামলা ও এক ধরনের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছে। ভেনেজুয়েলা ইতিমধ্যে রাশিয়া, চীন ও ইরানের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা জোরদারে সহযোগিতা চেয়েছে।
রাশিয়া সোমবার ভেনেজুয়েলার সঙ্গে একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি অনুমোদন করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন