কঠিন বিপদ-আপদ ও দুঃসময় থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া ও প্রার্থনা করা। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বিপদ থেকে মুক্তির জন্য অসংখ্য দোয়া ও আমল বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও জীবনের প্রতিটি কঠিন মুহূর্তে আল্লাহর কাছে একান্তভাবে দোয়া করতেন। শরীরকে সজীব রাখার জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, তেমনি অন্তরের (রুহ বা কলবের) পুষ্টির জন্য প্রয়োজন আল্লাহর জিকির। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আমাকেই স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’
যদিও বিপদে-আপদে আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মুমিনকে ধৈর্যধারণের উপদেশ দিয়েছেন। বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। (সুরা বাকারাহ, আয়াত, ১৫৩)
কুরআন এবং হাদিসের আলোকে কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি পেতে তিনটি বিশেষ আমল করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি ধর্মীয় আলোচনার এক ভিডিওতে এ আমলের পরামর্শ দেন। শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি লাভের জন্য তিনটি আমল বিশেষভাবে সহায়ক— দোয়া ইউনূস, ইস্তেগফার এবং দুরুদ শরীফ।
প্রথম আমল দোয়া ইউনূস। এটি নবী ইউনুস (আ.) কর্তৃক পাঠ করা এক বিশেষ দোয়া, যা সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার শক্তিশালী উপায় হিসেবে কোরআনে উল্লেখ রয়েছে। দোয়াটি হলো- ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ-জ্বালিমিন।’ (অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; তুমি পবিত্র, নিশ্চয়ই আমি সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছি।)
দ্বিতীয় আমল ‘ইস্তেগফার’ অর্থাৎ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। এটি আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইবাদত। সহজভাবে বলা যায়, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই) বলাও ইস্তেগফারের অন্তর্ভুক্ত। তবে এর শ্রেষ্ঠ রূপ হলো ‘সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার।’ ইস্তেগফারটি হলো- আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।’
এর অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ, আমি তোমার দাস। আমি যথাসাধ্য তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার নিকটে আশ্রয় চাই। আমি তোমার অনুগ্রহ স্বীকার করি এবং আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করো, কেননা তুমি ছাড়া কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না।’
তৃতীয় আমল হলো দুরুদ শরীফ পাঠ করা। এটি হযরত মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি আল্লাহর শান্তি ও রহমত বর্ষণের এক বিশেষ প্রার্থনা। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের নবীর প্রতি দুরুদ পাঠের নির্দেশ দিয়েছেন, আর এর ফজিলত হিসেবে আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ হয়।
সবচেয়ে বহুল পঠিত দুরুদ হলো দুরুদে ইব্রাহীম। এর উচ্চারণ হলো— ‘আল্লাহুম্মা সাল্লে আ'লা মোহাম্মাদাও ও আ'লা আলে মোহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আ'লা ইব্রাহিমা ও আ'লা আলে ইব্রাহিম, ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আ'লা মোহাম্মাদেও ও আ'লা আলে মোহাম্মাদ, কামা বারকতা আ'লা ইব্রাহিমা ও আ'লা আলে ইব্রাহিম, ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ।’
এ ছাড়াও সংক্ষিপ্ত আকারে ছোট দুরুদও পাঠ করা যায়— ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ (অর্থ: আল্লাহ তার ওপর শান্তি বর্ষণ করুন।)
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, এই তিনটি আমল নিয়মিতভাবে করলে আল্লাহ তায়ালার রহমত ও সাহায্যে মানুষ বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে পারে। তিনি নিজেও এ আমল করে উপকার পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন আহমাদুল্লাহ। তবে আমলগুলোকে নিদিষ্ট করে কোন সংখ্যায় করতে নিষেধ করেছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন