বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৪, ০৮:০৫ পিএম

কেয়ারটেকার থেকে শতকোটি টাকার মালিক গিনি

মোস্তাফিজুর রহমান সুমন

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৪, ০৮:০৫ পিএম

কেয়ারটেকার থেকে শতকোটি টাকার মালিক গিনি

ছবি সংগৃহীত , মাহবুব আরা বেগম গিনি

ঢাকা: সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হয়ে মাহবুব আরা বেগম গিনি বনে যান সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর এই নেত্রী ক্ষমতার অপব্যবহার করে হয়েছেন শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক। যেন আলাউদ্দিনের চেরাগ পাওয়ার মতো।  

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আশুলিয়ায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রবিউস সানি শিপু হত্যাচেষ্টা মামলায় গাইবান্ধা-২ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ মাহবুব আরা বেগম গিনি পুলিশি হেফাজতে তিন দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। গত মঙ্গলবার তাকে ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া সুলতানা তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে, গত সোমবার রাতে মাহবুব আরা বেগমকে ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা গেছে, মাহবুব আরা বেগম গিনি ও তার ভাই টুটুল বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়ির কেয়ারটেকার ছিলেন। ৩২ নম্বরের কেয়ারটেকার হওয়ার সুবাদে সান্নিধ্য লাভ করেন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার। তারপর হঠাৎ বনে যান শেখ হাসিনার আত্মীয়। আত্মীয়পরিচয়ে মাহবুব আরা বেগম গিনি শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হন। তার বাড়িতে রান্না করা, পারিবারিক কাজকর্ম করতেন বলে গিনির ঘনিষ্ঠজনেরা বলেছেন। তার বদলে তিনি পেয়েছেন শত শত কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ। আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়ে এমপি হয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন শত শত কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। অবৈধ শতকোটি টাকা নিয়ে এখন কোথায় আছেন, তা জানতে চান গাইবান্ধাবাসী।

মাহবুব আরা বেগম গিনি আওয়ামী লীগের টিকিটে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন গাইবান্ধা-২ সদর আসন থেকে। টাকা ছিটিয়ে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই উন্নয়নের নামে অর্থ রোজগারের নতুন কৌশল আবিষ্কার করেন। নিজেকে সৎ নির্ভীক দেখিয়ে তার ভাতিজা জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব রাজিব ও মৃদুল মোস্তাফি ঝন্টুকে সঙ্গে নেন। তিনি বেশির ভাগ সময় থাকতেন ঢাকায়। আর তার হয়ে কাজ করতেন ভাতিজা ও ঝন্টু। ঝন্টু গিনি এমপির হ্যান্ডব্যাগ বহন করতেন। পেছনে পেছনে থাকতেন। ফরমায়েশ খাটতেন। গাইবান্ধায় এসে তার হাতের ব্যাগটা ধরিয়ে দিতেন মৃদুল মোস্তাফি ঝন্টুর হাতে। আর ভাতিজা যুবলীগ নেতা আহসান হাবীব রাজিবকে দায়িত্ব দেন বিভিন্ন অফিসের কাজ ভাগাভাগি করার জন্য। তার বদৌলতে বেকার রাজিব বনে যান বড় ব্যবসায়ী হিসেবে।

গাইবান্ধা সদর উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদে মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল মেরামত, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, মুজিব শতবর্ষের বিশেষ প্রকল্পের কাজ তালিকা করা ও ভাগাভাগির দায়িত্বে ছিলেন ব্যাগ ঝন্টু। ১৫ বছরে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পকাজ পত্রে সম্পাদন দেখানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পিআইও ও ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে ভাগবাটোয়ারা করতেন এই ঝন্টু।

১৫ বছরে মসজিদ, মন্দির, রাস্তাঘাট ও স্কুল-মাদ্রাসার উন্নয়নের অন্তত সহস্রাধিক প্রকল্প থেকে মৃদুল মোস্তাফি ঝন্টুর মাধ্যমে মাহবুব আরা বেগম গিনি নিয়েছেন অন্তত শতকোটি টাকা। শুধু তাই নয়, এতিমখানা ও গাইবান্ধা হাসপাতালের রোগীদের খাবার থেকে মাসে ৫০ হাজার টাকা, জেলখানার বন্দিদের খাবারের টাকা থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হতো ঝন্টুর মাধ্যমে। সে কারণে এসব পরিদর্শন টিমের সদস্য নির্বাচিত করে দেওয়া হয় ঝন্টুকে। গাইবান্ধা সদর উপজেলার ২২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৩ সাল থেকে 
দপ্তরি-কাম-নৈশপ্রহরীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব নিয়োগে এমপিদের বাদ দিয়ে কোনো কিছু হতো না। সে কারণে প্রতিটি পদের বিপরীতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা করে নেওয়া হয় প্রার্থীদের কাছে। এতে প্রায় ২২১টি বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরীদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া হয় ১ কোটি টাকার বেশি। আর এই টাকা যেত যুবলীগ নেতা, ভাতিজা রাজিব ও ঝন্টুর হাত দিয়ে এমপির হাতে। অন্যদিকে অফিসের টেন্ডারবাজি, কাজ বাগিয়ে নেওয়া, কাজ দিতে বাধ্য করা হতো বিভিন্ন প্রকৌশলীদের। অফিসে গেলেই শোনা যেত কাজ তো রাজিব ভাইয়ের জন্য। ১৫ বছরে যত কাজ হয়েছে তার মধ্যে বড় কাজগুলো রাজিবকে দিতে বাধ্য করা হয়।

রাজিব সাহেব ১৫ বছরে অন্তত ১০০ কোটি টাকার কাজ করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজ হলো গাইবান্ধা থেকে সুন্দরগঞ্জ পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাজ। কাজটি বগুড়ার ঠিকাদারের নামে নিয়ে তাকে ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়। এমপি গিনি নিজে কখনো টাকাপয়সার ধারেকাছেও যেতেন না। স্কুল-কলেজের নিয়োগ হলেই তাকে দিতে হতো মোটা অঙ্কের টাকা। এভাবে লুটপাট করে এমপির ভাতিজা আহসান হাবীব রাজিব ও ব্যাগ ঝন্টুও আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যান। টাকার পাহাড় গড়েছেন। কোটি কোটি টাকা দিয়ে গাইবান্ধা শহরের থানাপাড়ায় বানিয়েছেন ৫ তলা বিদেশি পাথরের রাজপ্রাসাদ। কিনেছেন জায়গা জমি। শহরের প্রাণ কেন্দ্রে কোটি কোটি টাকার জায়গা কিনে বহুতল শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণ করছেন।

জুলাই সংস্কার আন্দোলনে বিক্ষুব্ধ জনতা এমপি গিনি, ভাতিজা রাজিবের রাজপ্রসাদ তুল্যবাড়ি ভাঙচুর করেন। তাদের বিরুদ্ধে বিএনপি অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলা করা হয়েছে। এমপির ব্যাগ বহনকারী ঝন্টু শহরের প্রাণকেন্দ্রে গড়ে তুলেছেন চারতলা বাড়ি। ব্যাংকে কোটি টাকার এফডিআর। পোস্ট অফিসে এফডিআর।
 

আরবি/এস

Link copied!