বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৪, ১২:২৪ এএম

তুচ্ছ ঘটনায় তুলকালাম

মেগা মানডে সংঘাত-সংঘর্ষে রণক্ষেত্র

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২৪, ১২:২৪ এএম

মেগা মানডে সংঘাত-সংঘর্ষে রণক্ষেত্র

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘাত-সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর মাতুয়াইল, কাজলা ও যাত্রাবাড়ী এলাকা। লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও হামলা-ভাঙচুর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এ সময় মোল্লা কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। হামলা করে তছনছ করে দেওয়া হয় মোল্লা কলেজ। গণভবন স্টাইলে লুট করে নেওয়া হয় কম্পিউটার, ল্যাপটপ, চেয়ার, ফ্যানসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র। এলাকাবাসীসহ মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজ শিক্ষার্র্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলে দুই ঘণ্টাব্যাপী। এ সংঘর্ষে গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের দাবি, চিকিৎসার অবহেলায় এক ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগের ঘটনায় পুলিশের ব্যর্থতায় ঘোষণা দিয়ে এমন ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটেছে।

খবর পেয়ে র‌্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দুপুরের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রায় ৫ ঘণ্টা পর ওই সড়কে বিকেল ৫টা থেকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ছাত্রবেশে স্বার্থান্বেষীরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে ভাঙচুর-হামলা চালিয়েছে।

শিক্ষার্থীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও বহু আহতের ঘটনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা-পুলিশপ্রধানের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় শিক্ষার্থী ও সাধারণ প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাদের দাবি, একদিন আগেই ঘোষণা দিয়ে একদল শিক্ষার্থী এসে ভাঙচুর করল, অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শুধুই চেয়ে দেখল। উদ্ভূত এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না নিতে পারার সব দায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা-পুলিশপ্রধানের। অবিলম্বে এই দায় নিয়ে তাদের পদত্যাগের দাবি করেন তারা।

জানা গেছে, পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেলে মাহাবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় গত রোববার ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল। পূর্বঘোষিত সেই ‘সুপার সানডে’ কর্মসূচির মধ্যে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ও পাশের সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় মোল্লা কলেজসহ কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। ওই সময় সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছিলেন নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। গণ্ডগোলের মধ্যে নিরাপত্তার কারণে মাঝপথে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ওই হামলা ও লুটপাটের প্রতিবাদে সোমবার ‘মেগা মানডে’ কর্মসূচির ডাক দেন সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর অংশ হিসেবে গতকাল সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে জড়ো হতে শুরু করেন। পরে তারা মিছিল নিয়ে কবি নজরুল কলেজের সামনে আসেন। সেখানে সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজ ছাড়াও অন্য কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হওয়ার পর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ যেসব কলেজের শিক্ষার্থীরা রোববারের হামলায় জড়িত ছিল, তাদের বিচার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। দুপুর ১২টার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা যাত্রাবাড়ীতে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ অভিমুখে রওনা হন। কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা যাত্রাবাড়ীতে মোল্লা কলেজের সামনে গিয়ে প্রথমে ঢিল ছুড়তে শুরু করে। এতে কলেজ ভবনের সামনের কাচসহ জানালার কাচ ভেঙে যায়। এ সময় মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে লাঠিসোটা নিয়ে মোল্লা কলেজের ভেতরে ঢুকে পড়ে কিছু শিক্ষার্থী। তারা সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। দুপুর আড়াইটায় দিকে মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। দুই ঘণ্টা পরে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। হামলা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় শতাধিক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৪৫ জন ও ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অন্তত ৩০ জন চিকিৎসা নিয়েছে। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী ও মাতুয়াইলের স্থানীয় ক্লিনিকে অন্তত ৩৩ জন চিকিৎসা নিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে মোল্লা কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলা-ভাঙচুর ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় তাদের শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই হামলা, লুটপাটের ন্যায়বিচারের দাবিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।

গতকাল ঘটনাস্থলে দেখা যায়, শুরুতে হামলাকারী শিক্ষার্থীরা কোনো প্রতিরোধের মুখে পড়েনি। দুপুর ১টার কিছু আগে তাদের ধাওয়া দেয় মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। তখন সংঘর্ষ শুরু হয়। হামলার পর মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের গেট ভাঙচুর করে ভেতরে ঢুকে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ার, কম্পিউটার-ল্যাপটপ-ডকুমেন্টসহ মূল্যবান অসংখ্য জিনিস লুটপাট করে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় মোল্লা কলেজ।

‘মেগা মানডে’ কর্মসূচি সম্পর্কে সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী আরাফাত রহমান সাংবাদিকদের বলেন, রোববার ‘সুপার সানডে’ ঘোষণা দিয়ে মোল্লা কলেজসহ অন্যান্য কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের ও কবি নজরুলের ক্যাম্পাসে ভাংচুর ও লুটপাট করে। এর জন্য ক্ষমা চাওয়া দূরের কথা, উল্টো রাতের বেলা তারা তাদের ফেসবুক গ্রুপগুলোতে এই হামলা নিয়ে হাসাহাসি করে, উসকানিমূলক পোস্ট দেয়। তার প্রতিবাদে আমরা ‘মেগা মানডে’ কর্মসূচি দিয়েছি।

ড. মাহবুবুর রহমান কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ সামীর বলেন, শিক্ষার্থীর নাম ধরে লোকজন ক্লাস চলাকালে আমাদের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের ওপর হামলা চালায়। তারা প্রতিটি রুমে ভাঙচুর করে এবং লুটতরাজ চালায়। হামলায় শতাধিক শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী আহত হয়ে আশপাশের হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হামিমুল কবির নামে ড. মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, সকাল থেকেই আমরা আমাদের কলেজের সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। তখন আমরা ছিলাম ২০০ জনের মতো, কিন্তু হঠাৎ করেই তারা হাজার-হাজার শিক্ষার্থী এসে একসঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় কারো হাতে রামদা, কারও হাতে বিদেশি অস্ত্র এমনকি বোমাও ছিল।

তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে তাদের সঙ্গে টিকতে না পেরে আমরা পিছু হটি। এ সময় আমাদের বেশকিছু বন্ধু-বান্ধব মারাত্মকভাবে আহত হয়। এই সুযোগে তারা কলেজ ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকে এবং ব্যাপক ভাঙচুর করে। এ সময় ভেতরে থাকা বেশকিছু শিক্ষার্থী এবং কর্মচারীকে তারা বেধড়ক মারধর করে।

সংঘর্ষের মূল সূত্রপাত সম্পর্কে জানতে চাইলে আব্দুল হাকিম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, এই ঘটনার মূল সূত্রপাত হয় ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে। সেখানে ড. মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে গিয়ে মৃত্যু হয়। এর প্রতিবাদে মোল্লা কলেজসহ ২৫টি কলেজ একত্রে আমরা আন্দোলন করতে গিয়েছিলাম। সেদিন সোহরাওয়ার্দী কলেজও আমাদের সঙ্গে ছিল।

তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলন চলাকালে সোহরাওয়ার্দী কলেজের কিছু শিক্ষার্থী টাকা খেয়ে আমাদের বিরুদ্ধে চলে যায়। এমনকি সেদিন তারা আমাদের কিছু ছেলেকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। এভাবে তারা দুইদিন আমাদের পিটিয়েছে, তারপরও আমরা কিছু বলিনি। এরপর আমরা সোহরাওয়ার্দী কলেজের দিকে এগিয়ে গেলে ভেতর থেকে ককটেল এবং গুলি ছোড়া হয়। তখন আমাদের স্টুডেন্টরা ক্ষিপ্ত হয়ে ভেতরে ঢুকে যায় এবং ভাঙচুর চালায়। এরপর তারা আজকে সাতটি কলেজ মিলে আমাদের মারতে এসেছে।

কামরুজ্জামান নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, মোল্লা কলেজের প্রতিটি ডিপার্টমেন্ট, প্রতিটি ল্যাব সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও কবি নজরুলের শিক্ষার্থীরা এসে তছনছ করে ফেলেছে। কলেজের ভেতরে এমন একটা জিনিস নেই যা অক্ষত অবস্থায় আছে।

তিনি বলেন, প্রশাসন যদি সময়মতো আসত এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিত তাহলে আজকের এ অবস্থা হতো না। তাদের হামলায় আমাদের অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। শুনেছি বেশ কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে। আজকের এই পরিস্থিতির জন্য পুরোপুরি দায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তামাশা দেখেছে।

আরবি/জেডআর

Link copied!