সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫, ০৩:১০ এএম

সঞ্চয়পত্র ভাঙানো বেড়েছে কমেছে বিক্রিও

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫, ০৩:১০ এএম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মূল্যস্ফীতির চাপে পড়ে মানুষ নতুন করে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না করে পুরোনো বিনিয়োগ ভাঙিয়ে সংসার চালাতে বাধ্য হচ্ছেন।

পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৩২ হাজার কোটি টাকার ওপরে সঞ্চয়পত্র ভেঙেছেন গ্রাহকেরা। এর মধ্যে গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র গ্রাহকেরা ভেঙেছেন।

বিপরীতে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ শতাংশ বিনিয়োগ কম হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গত বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

মূল্যস্ফীতির চাপে গত দুই বছরে দেশের ১ কোটি মানুষ দরিদ্র হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে বলে জানিয়েছে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড)।

মোটা চাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালের জুনে যে মোটা চালের প্রতি কেজির দাম ছিল ৪৫-৪৮ টাকা, তা (২০২৪ সালের জুনের হিসাব) বেড়ে এখন ৪৮-৫২ টাকা হয়েছে।

 এই সময়ে সয়াবিন তেলের দাম ১২ শতাংশ, প্যাকেটজাত আটা ৬৬ শতাংশ, চিনি ৭৫ শতাংশ ও মোটা দানার মসুর ডালের দাম বেড়েছে ৪৩ শতাংশ।

একই সময়ের বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) তথ্যানুযায়ী, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশে চালের দাম বেশি।

এ ছাড়া দেশে এখন চিনির দাম যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোর চেয়েও বেশি। গত সাড়ে পাঁচ বছরে চিনির দাম ১৫২ শতাংশ বেড়েছে, এখন চিনির কেজি ১৩০ টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি কেজি চিনি ইইউতে ৩৯ টাকা ও যুক্তরাষ্ট্রে ৯৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৩২ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভেঙেছে গ্রাহকেরা।

তার মধ্যে অক্টোবরে ৯ হাজার ৮৩ কোটি, নভেম্বরে ৮ হাজার ১৫০ কোটি এবং ডিসেম্বরে ৮ হাজার ৪৬১ কোটি, অর্থাৎ তিন মাসে ২৫ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়েছেন গ্রাহকেরা।

এতে করে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে সঞ্চয়পত্রের প্রকৃত বিক্রি ২ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা কমে গেছে। তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি কমেছিল ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৩০ হাজার ১০৯ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। প্রতি তিন মাসে গড়ে বিক্রি হয়েছে ১৫ হাজার ৫৪.৫ কোটি টাকা; যে খানে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বিক্রি হয়েছিল ৪১ হাজার ২৯০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র।

তার মানে, চলতি অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে ১ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা বা প্রায় ২৭ শতাংশ।

সাধারণ মানুষের মধ্যে সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভেঙে ফেলার পরিমাণ বেশ বেড়েছে। এদিকে বিক্রি কমে যাওয়ার অর্থ হলো, সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া কমছে। এতে সরকারকে সুদও কম গুনতে হবে।

তবে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধের জন্য সরকারকে এখনো বাজেটে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, সঞ্চয়কারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করতে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার গত জানুয়ারিতে বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত সঞ্চয় কর্মসূচিগুলোর (স্কিম) মুনাফার হার বেড়ে ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে।

তার পরও গ্রাহক টানতে পারছে না সঞ্চয়পত্র। সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি অর্থ জমা রাখেন ব্যাংকে।

তারপর নিরাপত্তা ও অধিক মুনাফার আশায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন।
সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়া ও ভাঙার হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।

তারা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ব্যয় বেড়েছে। সেই হারে আয় বাড়ছে না। সে জন্য অনেকেই সঞ্চয়পত্র ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার অনেক ব্যাংক গ্রাহকের টাকা দিতে পারছে না।

এই আস্থাহীনতার কারণেও সঞ্চয়পত্র ভাঙছেন অনেক গ্রাহক। অন্যদিকে সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংক হিসাব জব্দ ও স্থগিতের মতো পদক্ষেপ নেওয়ায় অনেকেই সঞ্চয়পত্রে টাকা রাখতে আগ্রহী হচ্ছেন না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় ৭৮ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। তার বিপরীতে গ্রাহকেরা সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়েছেন ৯৯ হাজার ৯৭২ কোটি টাকার। অর্থাৎ, নিট বিক্রি ২১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা কমেছে।

তার মানে, সরকার গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ এক টাকাও পায়নি। নিট বিক্রিকে সরকারের ঋণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকারের নেওয়া ঋণের পুঞ্জীভূত পরিমাণ ২০২৪ সালের জুন শেষে ছিল ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা।

ডিসেম্বর শেষে তা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকায়।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে ফেলার প্রথম কারণ হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি।

মজুরি যে হারে বাড়ছে, তার চেয়ে দ্বিগুণ হারে ব্যয় বাড়ছে। সে জন্য সঞ্চয় ভাঙতে হচ্ছে মানুষকে।

এ ছাড়া অনেক ব্যাংকের ওপর গ্রাহকের বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতি রয়েছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছে না। সামগ্রিক ব্যাংক খাতে আস্থার ঘাটতির কারণেও সঞ্চয়পত্র ভাঙার হার বাড়ছে।

তিনি বলেন, ব্যাংকে আমানত ও সঞ্চয়পত্রের সুদহারের মধ্যে তফাত কমে এসেছে। আবার সরকার পরিবর্তনের পর অনেক সম্পদশালীর ব্যাংক হিসাব ও বিনিয়োগে নজরদারি বেড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে অনেকে সঞ্চয়পত্র ভেঙে সোনাসহ অন্যান্য বিকল্প পণ্যে বিনিয়োগ করছেন।

আরবি/জেডআর

Link copied!