দুই বছর আগের বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে যখন মাতোয়ারা হওয়ার কথা ছিল স্পেন নারী ফুটবল দলের, তখনই তাদের বিজয়ের গৌরব ঢেকে যায় এক লজ্জাজনক বিতর্কে।
২০২৩ সালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো নারী বিশ্বকাপ জয়ের মুহূর্তেই ঘটে যায় রুবিয়ালেসের ‘চুম্বন’ কাণ্ড।
আর রোববার রাতে, সেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই ইউরো ২০২৫-এর ফাইনালে মাঠে নামতে যাচ্ছে স্পেন — তবে এবার এক ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে, এক বিশুদ্ধ প্রতিশ্রুতি ও পুনরুজ্জীবনের মঞ্চে।
রুবিয়ালেসের চুম্বন থেকে আন্দোলন
বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে নেওয়ার মুহূর্তে, স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট লুইস রুবিয়ালেস স্পেনের ফরোয়ার্ড জেনি হেরমোসোকে ঠোঁটে চুম্বন করেন—যা নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয় তীব্র সমালোচনা ও প্রতিবাদ।
হেরমোসো বলেন, চুম্বনটি তার সম্মতিতে ছিল না। এর ফলে স্পেনের ৮১ জন খেলোয়াড়, যাদের মধ্যে বিশ্বকাপজয়ী ২৩ জনও ছিলেন, ঘোষণা দেন—রুবিয়ালেস দায়িত্বে থাকলে তারা আর খেলবেন না।
এই আন্দোলনের ফলেই স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন (RFEF) খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলোচনা করে ‘গভীর সংস্কার’-এর প্রতিশ্রুতি দেয় এবং রুবিয়ালেসকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।
একই সঙ্গে বিতর্কিত কোচ হোর্হে ভিলদাকেও সরিয়ে তার সহকারী মন্তসে তোমেকে নতুন কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
নতুন কোচের অধীনে স্পেন দল এখন অনেক বেশি একত্রিত এবং মনোযোগী। ইউরো ২০২৫-এ তাদের গ্রুপ পর্বের পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ—পর্তুগাল, বেলজিয়াম ও ইতালিকে হারিয়ে মোট ১৪ গোল করে এবং কেবল ৩টি গোল হজম করে।
কোয়ার্টার ফাইনালে সুইজারল্যান্ডকে পরাজিত করার পর, সেমিফাইনালে আটবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় তারা।
ফাইনাল ম্যাচে মাঠে নামার আগে স্পেন মিডফিল্ডার আইতানা বোনমাতি বলেন, দলটি এখন অনেক বেশি সংহত এবং সুস্থ সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে চলছে। এটি মাঠেও প্রতিফলিত হচ্ছে।
জয়ের অপেক্ষায় এক বিশুদ্ধ মুহূর্ত
২০২৩ বিশ্বকাপ জয় তাদের জন্য গর্বের হলেও, তা কলঙ্কিত হয়েছিল বিতর্কের কারণে। এবারের ইউরো ফাইনাল যেন সেই অতীতকে ছাপিয়ে যাওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে স্পেনের জন্য।
স্পেনের মিডফিল্ডার আলেক্সিয়া পুতেয়াস বলেন, আমরা এখন কেবল খেলাতেই মনোযোগ দিচ্ছি। উদযাপন নিয়ে ভাবছি না, বরং প্রস্তুত থাকতে চাই। কারণ আমাদের লক্ষ্য শিরোপা জয়।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের মধ্যে ১১ জন এবারের ইউরো স্কোয়াডে থাকলেও, জেনি হেরমোসো নেই।
সাংবাদিক গুইলেম বালাগে ব্যাখ্যা করেছেন, দল এখন আগের অধ্যায় পেছনে ফেলতে চায়। তারা যা হারিয়েছে, তা ফিরবে না—কিন্তু তারা সমাজকে বদলাতে পেরেছে। সেটিও কম অর্জন নয়।
ইংল্যান্ড বনাম স্পেনের এই ফাইনাল শুধু আরেকটি শিরোপার লড়াই নয়, বরং স্পেনের নারী ফুটবলের পূর্ণ পুনর্জাগরণের মুহূর্ত।
বিতর্ক ও বঞ্চনার গল্প ছাপিয়ে, লা রোখা এবার ইতিহাসের পাতায় নিজেদের নাম সোনালি অক্ষরে লেখার জন্য প্রস্তুত।
আপনার মতামত লিখুন :