ঢাকা রবিবার, ০৩ আগস্ট, ২০২৫

বউ কাঁধে নিয়ে দৌড়ে সব রেকর্ড পেছনে, জিতলেন স্ত্রীর ওজন সমান বিয়ার

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২৫, ০৪:২০ পিএম
ক্যালেব ও জাস্টিন রোসলার। ছবি- সংগৃহীত

স্ত্রীকে কাঁধে তুলে ২৫০ মিটার দৌড়ানো—পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়া আর বাধা পেরোনোর এই রোমাঞ্চকর প্রতিযোগিতায় ক্যালেব রোসলার শুধু বিশ্বরেকর্ডই গড়েননি, সঙ্গে জিতেছেন স্ত্রীর ওজন সমান বিয়ারও।

যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন রাজ্যের ওয়াকেশা শহরের এই দম্পতি—ক্যালেব ও জাস্টিন রোসলার চলতি বছরের জুলাইয়ে ফিনল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ‘ওয়াইফ ক্যারিয়িং ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ’-এ প্রথমবার অংশ নিয়েই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ১ মিনিট ১.১৭ সেকেন্ডে শেষ করে ভেঙেছেন পূর্বের সব রেকর্ড।

স্ত্রী বহন প্রতিযোগিতার জন্ম ফিনল্যান্ডের সোনকায়ারভি শহরে। ইতিহাস বলছে, ১৯ শতকে ‘রনকাইনেন দ্য রবার’ নামে কুখ্যাত ডাকাত তার দলে যোগদানের প্রশিক্ষণ হিসেবে সহযোগীদের দিয়ে কাঁধে করে ভারী পণ্য কিংবা স্থানীয় গ্রাম থেকে ‘চুরি’ করা নারী বহন করাতেন। 

সময়ের সাথে সেই অন্ধকার ঐতিহ্য আজ রূপ নিয়েছে পরিবারকেন্দ্রিক একটি বিনোদনমূলক খেলায়, যেখানে স্ত্রী নয়, বন্ধু বা সঙ্গীকেও কাঁধে তোলা যায়।

১৯৯২ সালে সোনকায়ারভিতে শুরু হওয়া এই বিশ্ব প্রতিযোগিতায় বয়স, লিঙ্গ ও সম্পর্কের সীমাবদ্ধতা নেই। এবারই প্রথমবারের মতো নারীদের জন্য আলাদা বিভাগও চালু করা হয়েছে।

ক্যালেব পেশাদার দৌড়বিদ নন, তবে দৌড়প্রেমী। ট্রায়াথলনে অংশ নেন নিয়মিত। ইএসপিএনের একটি ‘অদ্ভুত প্রতিযোগিতা’ শীর্ষক ভিডিওতেই প্রথম স্ত্রী বহন প্রতিযোগিতার কথা শুনে আগ্রহী হন তিনি। 

২০২১ সালে হঠাৎ স্থানীয় একটি বিজ্ঞাপন দেখে কৌতূহল থেকে অংশ নেন জাস্টিনকে সঙ্গে নিয়ে। প্রথম চেষ্টাতেই জয়, এরপর ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে টানা তিনবার উত্তর আমেরিকান চ্যাম্পিয়ন হন তারা।

জাস্টিন বলেন, পুরুষের যেমন শক্তি, গতি আর ভারসাম্য লাগে, তেমনি নারীর লাগে সাহস আর দৃঢ়তা। কারণ পুরোটা সময় তাকে উল্টো হয়ে ঝুলে থাকতে হয়।

তারা ব্যবহার করেন ‘এস্তোনিয়ান ক্যারি’ পদ্ধতি, যেখানে জাস্টিন ক্যালেবের কাঁধে উল্টোভাবে ঝুলে থাকেন, তার হাত দুটো ক্যালেবের বাহুর নিচে। এতে দৌড়ের সময় ক্যালেবের দুই হাত থাকে সম্পূর্ণ মুক্ত।

এবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ছিল ভিন্নরকম চ্যালেঞ্জ—প্রথমবারের মতো জলে ঝাঁপিয়ে নামতে হয় তাদের। ক্যালেব বলেন, আমি ভাবিনি পুরোটা ডুবে যাব, কিন্তু পানির ধাক্কায় নিচে চলে গেলাম। 

যেটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে, জাস্টিন ভয় না পেয়ে ঠিকমতো আঁকড়ে ধরে ছিল।

প্রথম প্রতিযোগী হিসেবেই তারা সবচেয়ে কম সময়ে নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছান। অপেক্ষা করতে হয় শেষ পর্যন্ত। একসময় আয়োজকরা মাইক নিয়ে এগিয়ে এলে বোঝা যায়—তারা বিজয়ী।

তাদের সময় ছিল ১:০১.১৭, যা আগের তিনবারের চ্যাম্পিয়ন লিথুয়ানিয়ার কিরক্লিয়াউস্কাস দম্পতিকে ৩ সেকেন্ডে পেছনে ফেলেছে।

এর আগে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শুধু ফিনল্যান্ড, রাশিয়া, এস্তোনিয়া আর লিথুয়ানিয়ার দল। এবার যুক্তরাষ্ট্রের রোসলার দম্পতি সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন।

জাস্টিন বলেন, এত দূর এসে যদি কিছু না করতে পারতাম, তাহলে হতাশ লাগত। কিন্তু জয় আমাদের যাত্রাকে অর্থবহ করে তুলেছে। ক্যালেব যোগ করেন, আমরা কেবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিইনি, ইতিহাসে যুক্তরাষ্ট্রের নামও লিখে দিয়েছি।