ঢাকা সোমবার, ১২ মে, ২০২৫

ঢাকার বাতাসে ‘আগুন’, জনজীবনে নাভিশ্বাস

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ১১, ২০২৫, ০৫:৩৭ পিএম
প্রচণ্ড গরমে একটু স্বস্তির আশায় খেটেখাওয়া মানুষ। ছবি-সংগৃহীত

সূর্যের জ্বলন্ত রশ্মিতে যেন টগবগে আগুন ঝরছে। রাজধানী ঢাকাও পুড়ছে অদৃশ্য আগুনে। প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা জনজীবনে।

জীবিকার তাগিদে বের হওয়া মানুষের দুর্ভোগ চরমে। ঘরের ভেতরেও স্বস্তি পাওয়া দায়।

উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা শীতাতত নিয়ন্ত্রিত দপ্তরে আয়েশে অফিস করলেও খেটেখাওয়া মানুষ পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে রাস্তার নির্মাণ শ্রমিক, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, হকার, ফুটপাতের ব্যবসায়ী, গার্মেন্টস শ্রমিক থেকে শুরু করে দিনমজুর- তীব্র গরমে সবার জীবনে নাভিশ্বাস।

পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায় নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিক আজাদ মিয়া বলেন, ‘রোদে দাঁড়াইলে মাথা ঘুরে যায়, কিন্তু কাজ তো করতে হবে। না খেয়ে তো বাঁচা যায় না। পানি খাই খাই ক্লান্ত হইয়া যাই।’

গুলিস্তানের রিকশাচালক সুজন খান বলেন, ‘তীব্র গরমে সর্দি ও পেট খারাপ হয়ে দুই দিন রিকশা চালাতে পারিনি। আজ বের হয়েছি রিকশা নিয়ে। অটোরিকশা থাকলে গরমে কষ্টটা একটু কম হয়। বাধ্য হয়ে এই গরমেও প্যাডেল রিকশা চালাতে হচ্ছে। সারা দিন তীব্র গরমের মধ্যে রিকশা চালিয়ে পানি আর শরবত খেতেই অনেক টাকা চলে যায়। এত গরম জীবনেও দেখি নাই।’

এই তীব্র গরমে চাহিদা বেড়েছে ফুটপাতের মুখরোচক নানা শরবতের। অনেকেই এক চুমুক শরবতে একটু ক্লান্তি দূর করছেন। তবে অনেকেই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। খাবারের ব্যাপারে অনেক সচেতন ব্যক্তিও গরমের যন্ত্রণায় সব বিধি মানছেন না।

মতিঝিল এলাকায় শরবত বিক্রেতা আল আমিন বলেন, ‘বেচাকেনা আগের চেয়ে এখন ভালো। এই গরমে বরফের পানির শরবতের একটু স্বস্তি পান গ্রাহকরা।’

স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে এত নিয়মকানুন মেনে ব্যবসা করা যায় না৷’

রাজধানীর গণপরিবহনের যাত্রীরা ভুগছেন চরম অস্বস্তিতে। এ ক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে মেট্রোরেল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই গরম স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন ও বিভিন্ন ত্বকজনিত সমস্যাও বাড়ছে।

টানা পাঁচ দিন তীব্র গরম, দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টি না হওয়া, দক্ষিণ দিক থেকে জলীয় বাষ্প কম আসা, বাতাসের গতি কমে যাওয়া- এসব কারণে চলমান তাপপ্রবাহ আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এর প্রভাবে ডায়রিয়া, হিটস্ট্রোকসহ গরমজনিত রোগবালাই বেড়ে গেছে।

সরকারি হাসপাতালগুলোতে হিট স্ট্রোক ও গরমজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। 

পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক সমাজ ও বিশেষজ্ঞরা। নইলে সামনে জনজীবন আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

রোববার (১১ মে) ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা।  

তবে গতকালের তুলনায় ঢাকায়ও আজ তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। 

আগামীকাল (১২ মে) তাপমাত্রা আরও কমবে জানিয়ে তিনি বলেন, কোথাও কোথাও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। ঢাকায় বৃষ্টি না হলেও আকাশ মেঘলা থাকতে পারে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার (১২ মে) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো, বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। 

সেই সঙ্গে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে।

এই সময়ে চলমান তাপপ্রবাহ কিছু কিছু জায়গায় প্রশমিত হতে পারে।