কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। গরমের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই।
এর মধ্যে রোববার (১১ মে) দুপুরের পর দেশের ১৪ জেলায় বৃষ্টি হয়েছে। তাতে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলেছে। আগামীকাল এর বিস্তৃতি আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম বিকেলে বলেন, আজ দুপুরের পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হতে থাকে।
আজ ময়মনসিংহ বিভাগের চার, সিলেট বিভাগের চার জেলা, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, রাঙামাটি, কুমিল্লা, বাহ্মণবাড়িয়া ও পঞ্চগড়ে বৃষ্টি হয়েছে। এসব জেলায় বজ্রসহ শিলাবৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে দিনে সূর্যের তাপ, বাতাসের কম গতিবেগ, দক্ষিণ থেকে আসা জলীয় বাষ্পের কমতি, বৃষ্টি না থাকা—এসব কারণেই তাপপ্রবাহ এমন বেড়ে যায়।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহেও তাপমাত্রা মোটামুটি সহনীয় ছিল। কিন্তু গত বুধবার থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। শুক্রবার ৪৫ জেলায়, শনিবার ৬২ জেলায়, আজ রোববারও দেশের অধিকাংশ জেলায় তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা আজ বিকেলে বলেন, এপ্রিল উষ্ণ মাস হলেও এবার গরম তেমন একটা ছিল না। মে শুরুর কয়েক দিন তাপমাত্রা কম থাকলেও ৭ তারিখ থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হয়।
এর মধ্যে চলতি বছরের রেকর্ড তাপমাত্রা দেখা যায়। রাজধানীতে গতকাল বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
কাজী জেবুন্নেছা আরও বলেন, আজ দেশের অধিকাংশ জেলায় আজও তাপপ্রবাহ ছিল। কিন্তু দুপুরের পর থেকে দেশের কয়েকটি জেলায় বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির এই বিস্তৃতি আগামীকাল আরও বাড়বে। দেশের সামগ্রিক তাপমাত্রা কমে আসতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, আজ দেশের তাপমাত্রা এমনই থাকতে পারে। তবে আগামীকাল সোমবার দেশের কয়েকটি বিভাগে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। এটি বিস্তৃত হয়ে মঙ্গলবার সারাদেশের অধিকাংশ স্থানে বৃষ্টি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ওমর ফারুক আরও বলেন, বৃষ্টি হলে গরম কমবে। বৃষ্টি না থাকলে তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। তবে বৃষ্টি হলে দেশের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে।
রোববার সকাল ৯টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা, ঢাকা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ ও যশোর জেলাসমূহের ওপর দিয়ে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া দেশের অন্যত্র মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মাঝারি তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা ৪২-এর বেশি হলে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে গণ্য হয়।
বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো অথবা বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে ।
সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সারাদেশে চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। আজ ঢাকার বাতাস পশ্চিম অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হবে। সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯৯ শতাংশ।
আজ ঢাকায় সূর্যান্ত সন্ধ্যা ৬টা ৩২ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যোদয় হবে ভোর ৫টা ১৭ মিনিটে। সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
আজ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দুপুর ১২টায় রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা আজ ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ছিল রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।