পেহেলগাম ইস্যুতে পাকিস্তানের সুর নরম শোনালেও এরই মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ভারত।
দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো দাবি, পাকিস্তানে হামলা এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। এ জন্য ভারত প্রস্তুত।
অন্যদিকে, নয়াদিল্লি হামলার হুমকিতে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসলামাবাদ। ফলে চির প্রতিদ্বন্দ্বী দু’দেশের মধ্যে তৈরি হয়েছে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি।
এরই মধ্যেই ভারত-পাকিস্তান ‘বাণিজ্যযুদ্ধে’ লিপ্ত হয়েছে। একে অপরকে নিজ ভূখণ্ডের স্থল, নৌ ও আকাশপথ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বন্ধ করে দিয়েছে সীমান্ত বন্দরও। বাতিল করেছে ‘সার্ক ভিসা’।
এমনকি পাকিস্তানের ওপর ‘ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন’ জারি করেছে ভারত। পাল্টা ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে সাইবার হামলা চালাচ্ছে পাকিস্তানভিত্তিক হ্যাকার গ্রুপগুলো।
অভিযোগ উঠেছে, পাকিস্তানের আইএমএফ থেকে নেওয়ার ঋণের কিস্তি বন্ধে তৎপরতা চালাচ্ছে ভারত। এর মাধ্যমে রিজার্ভের থলেতে টান পড়া পাকিস্তানকে অর্থসংকটে ঘায়েল করতে চায় নয়াদিল্লি।
এমন পরিস্থিতিতে আগামীকাল ৭ মে সারা দেশে বেসমরিক মহড়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। এ জন্য তোরজোড় প্রস্তুতি চলছে। দেশের অন্তত ২৫০ জেলায় এই মহড়া অনুষ্ঠিত হবে।
যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কী করা যাবে, আর কী করা যাবে না, সাধারণ নাগরিকদের সচেতনতার জন্যই এই মহড়ার আয়োজন বলে জানিয়েছে কেন্দ্র সরকার।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২০১০ সালের একটি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, দেশের ২৭টি রাজ্য ও আটটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে মোট ২৫৯টি ‘বেসামরিক প্রতিরক্ষা জেলা’ বা ‘সিভিল ডিফেন্স ডিস্ট্রিক্ট’ রয়েছে।
তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ৩১টি জায়গাও। কেন্দ্র রাজ্যগুলোতে মহড়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মনে করা হচ্ছে এই জেলাগুলোতেও বেসামরিক মহড়া চলবে।
১৯৭১ সালের বাংলাদেশ-পাকিস্তান যুদ্ধের পর এই প্রথম ভারতজুড়ে এমন বেসামরিক মহড়া হতে চলেছে। রাজ্যগুলোতে ‘মক ড্রিল’ করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র সরকার।
সাধারণ নাগরিক ও শিক্ষার্থীদের ‘মক ড্রিল’ করাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এয়ার রেড সাইরেন থেকে ব্ল্যাক আউটের জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত।
থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে। পুঞ্চে সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ওষুধ নেই। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আনা হচ্ছে ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম।
২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দিতে অ্যাম্বুলেন্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রস্তুত বলে জানা গেছে। পেহেলগামের ঘটনায় কোনো তদন্ত ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত।
পাকিস্তান তা অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের এই প্রস্তাবে এখন পর্যন্ত সাড়া দেয়নি নয়াদিল্লি।
এদিকে, ওই ঘটনার পর টানা ১২ রাত ধরে পাকিস্তান-ভারত সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখায় গোলগুলি হয়েছে। উভয় দেশই বিষয়টি স্বীকার করেছে।
গত ২২ এপ্রিলের পর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ নৌ, সেনা ও বিমানবাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সেখানেই ২৬ জনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দেন তিনি। ফলে পাকিস্তানে হামলা করতে ‘পদ্ধতি, লক্ষ্য ও সময় নির্ধারণ’ যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানরা।
৭ মে দেশজুড়ে বেসামরিক মহড়ার আগের দিন সকাল থেকেই বৈঠক করেছেন নরেন্দ্র মোদি ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। গত ৪৮ ঘণ্টা এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো উভয়ের মধ্যে বৈঠক হলো।
পেহেলগামে হামলার জবাব দেওয়া হবে বলে আগেই স্পষ্ট করেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। এরপর থেকেই দফায় দফায় একাধিক শীর্ষস্তরের কর্মকর্তা ও মন্ত্রীর বৈঠক হয়েছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, এনএসএ অজিত দোভাল, চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ অনিল চৌহান, তিন সামরিক বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে দফায় দফায় একাধিক বৈঠক করেছেন মোদি।
কূটনৈতিক স্তরে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করার জন্য আন্তর্জাতিক মহলে বেশ তৎপরতা চালাচ্ছে ভারত। তার সঙ্গেই সামরিকভাবে জবাব দেওয়ার জন্যও প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে।
বুধবারের এই বেসামরিক মহড়া ভারত-পাকিস্তান সম্মুখ যুদ্ধ ত্বরান্বিত করছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। দু’দেশের সম্মুখ যুদ্ধ পরিস্থিতি এখন ভারতের এই মহড়ায় পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :