ঢাকা মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০২৫

মিয়ানমারে স্কুলে বিমান হামলা, নিহত ২০ শিশু

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২৫, ১১:২০ এএম
বিমান হামলায় স্কুলে ২২ জন নিহত হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারে সামরিক জান্তার বিমান হামলায় একটি স্কুলে নিহত হয়েছেন ২২ জন। নিহতদের মধ্যে ২০ জনই শিশু। বাকি দুজন শিক্ষক।

ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (১৩ মে স্থানীয় সময়) সকালে, দেশটির সাগাইং অঞ্চলের ওয়ে থেইন কুইন নামের একটি গ্রামে। স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে একটি যুদ্ধবিমান স্কুলটির ওপর বোমা নিক্ষেপ করে।

এই গ্রামটি ২৮ মার্চের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

স্কুলেই প্রাণ গেল ২০ শিশুর

স্কুলের এক শিক্ষক জানান, “আমরা শিশুদের আশ্রয়ে নিতে চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু যুদ্ধবিমানটি হঠাৎ আসে এবং খুব দ্রুত বোমা ফেলে দেয়। কিছু বোঝার আগেই বিস্ফোরণ ঘটে।”

স্থানীয় শিক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, এই হামলায় স্কুলের ২০ জন শিক্ষার্থী এবং ২ জন শিক্ষক নিহত হয়েছেন।

যুদ্ধবিরতির মধ্যেই হামলা

ঘটনার বেদনার জায়গা আরও গভীর হয় এই কারণে যে, মিয়ানমার সেনাবাহিনী মে মাসজুড়ে মানবিক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল।
তাদের দাবি ছিল, ২৮ মার্চের ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা এবং পুনর্গঠনকাজের জন্য এই যুদ্ধবিরতি দরকার।

উল্লেখ্য, ওই ভূমিকম্পে প্রায় ৩,৮০০ মানুষ মারা গিয়েছিল।

কিন্তু বাস্তবে যুদ্ধবিরতির কোনো প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন এলাকায়, বিশেষ করে সাগাইং, কারেন এবং চিন রাজ্যে লড়াই অব্যাহত আছে।

চলমান গৃহযুদ্ধ ও প্রতিরোধ

২০২১ সালে সেনাবাহিনী নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। এরপর থেকেই মিয়ানমারে ছড়িয়ে পড়ে গৃহযুদ্ধ।

জান্তা সরকার একদিকে সাধারণ মানুষ ও আন্দোলনকারীদের দমন করছে, অন্যদিকে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠন ও গণতান্ত্রিক প্রতিরোধ বাহিনীও সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই প্রতিরোধ যোদ্ধারা জান্তা বাহিনীকে বেশকিছু এলাকায় চাপে ফেলেছে। সেই প্রতিশোধ নিতেই হয়তো স্কুলের মতো নিরীহ স্থানে হামলা চালিয়েছে তারা।

কোনো বিবৃতি আসেনি সেনাবাহিনীর

এই হামলার বিষয়ে এখনো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য বা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে আন্তর্জাতিকভাবে এই হামলাকে নির্বিচার শিশু হত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধে শিশুদের এমন নিষ্ঠুর মৃত্যু সারা বিশ্বকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। একদিকে ভূমিকম্পের শোক, অন্যদিকে জান্তার বোমায় স্কুলে প্রাণ হারানো এই দ্বিগুণ বিপর্যয়ে দেশটির সাধারণ মানুষের জীবন আজ দুঃসহ।