ভারতজুড়ে এখন যেন একটাই স্লোগান ‘মোদি হটাও, ভারত বাঁচাও’। রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েন, অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থার কারণে ভারতের সাধারণ নাগরিকদের ক্ষোভ যেন বিস্ফোরণমুখী। এই ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার দল বিজেপি।
এবার সেই ক্ষোভের রোষানলে পড়েছেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং রিপাবলিক বাংলার সাংবাদিক ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ। তাদের ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।
ভারতের একাধিক সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, এ দুজন বর্তমানে নিখোঁজ এবং জনতার গণধোলাই খেয়ে তারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে পলায়ন করেছেন।
কী ঘটেছিল?
শুভেন্দু অধিকারী সম্প্রতি কাশ্মীর হামলা ইস্যুতে ২৬০ জন মুসলমানের লাশ চাওয়ার মতো চরম বিতর্কিত মন্তব্য করেন। অন্যদিকে সাংবাদিক ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ বারবার ইসলামোফোবিক প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে উত্তেজনা ছড়াচ্ছিলেন।
বাংলাদেশের প্রতি তার বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবও বহুবার প্রকাশ পেয়েছে বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠানে।
তাদের এ সব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে সাধারণ হিন্দু নাগরিকরাও রাস্তায় নেমেছেন। শুধু মুসলিম জনগণ নয়, এখন হিন্দু ব্যবসায়ী, কর্মজীবী ও শিক্ষিত সমাজও বিজেপি ও তার সহযোগীদের দায়ী করছেন ভারতকে যুদ্ধ ও বৈরিতার পথে ঠেলে দেওয়ার জন্য।
গণধোলাইয়ের গুঞ্জন
ভারতের একটি প্রথম সারির গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়- কলকাতা শহরে শুভেন্দু অধিকারী ও ময়ূখ রঞ্জন ঘোষকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি বিজেপির নিজস্ব কর্মীরাও এদের অবস্থান জানাতে পারছেন না।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশিদের মলম বিক্রেতা বলে কটাক্ষ করায় এবং ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে বাধা দেওয়ার হুমকির কারণে ময়ূখ রঞ্জন ঘোষকে জনতা রীতিমতো গণধোলাই দিয়ে কলকাতা থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
ক্ষোভের কারণ কী?
ময়ূখ ও শুভেন্দুর যুদ্ধবাজ উসকানি, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানো এবং বাংলাদেশবিরোধী অবস্থান ভারতের সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ তৈরি করেছে। পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, বাংলাদেশি পণ্য এবং রোগীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার ফলে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাজার ও চিকিৎসা খাত চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে।
নিখোঁজ ও পলায়ন?
যদিও বিষয়টি এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়, তবে সোশ্যাল মিডিয়া ও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, গণরোষের মুখে দুজনই আত্মগোপনে চলে গেছেন। অনেকে বলছেন, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া থাকায় তারা হয়তো দিল্লি বা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, এই ঘটনার পর তাদের বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
ভারতের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে শুভেন্দু অধিকারী ও ময়ূখ রঞ্জনের ঘটনার তাৎপর্য বড়। এটি শুধু দুটি ব্যক্তিকে ঘিরে ক্ষোভ নয়, বরং এটি ভারতীয় জনমতের পরিবর্তনের প্রতীক। এক সময় যাদের বক্তব্য দলীয় আদর্শে সমর্থিত ছিল, আজ তারাই জনতার রোষে পড়ছেন।
সামপ্রতিক এই উত্তাল পরিস্থিতি ভারতীয় রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের বার্তা দিচ্ছে। ভবিষ্যত বলবে- শুভেন্দু-ময়ূখের ঘটনার প্রভাব কতদূর গড়ায়।