তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে চীনের সঙ্গে একটি দীর্ঘস্থায়ী ও সম্ভাব্য রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে সরাসরি আঘাত আসতে পারে বিভিন্ন ঘাঁটি, এমনকি দেশটির মূল ভূখণ্ডেও।
এ মাসের শুরুতে, ক্যালিফোর্নিয়ার এডওয়ার্ডস এয়ার ফোর্স ঘাঁটিতে স্থানীয় নেতাদের ডেকে পাঠান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডগ উইকার্ট।
ঘাঁটি নিকটবর্তী নাগরিক নেতাদের সতর্ক করে তিনি বলেছিলেন,চীন যদি আগামী বছরগুলিতে তাইওয়ান আক্রমণ করে, তাহলে তাদের নিকটবর্তী অঞ্চলের সম্ভাব্য ব্যাপক বিপর্যয়ের জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত।
উইকার্ট বলেন, ‘এই যুদ্ধ যদি হয়, তাহলে এটি এখানেই শুরু হবে।’ একইসঙ্গে সাইবার হামলার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং অবকাঠামো ধ্বংসের আশঙ্কাও ব্যক্ত করেন তিনি।
উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার সেনাবাহিনীকে ২০২৭ সালের মধ্যে তাইওয়ান আক্রমণের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। যদিও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলেও তারা জানান।
উভয় দেশের সামরিক প্রস্তুতি এখন এমন মাত্রায় পৌঁছেছে যা গত কয়েক দশকে দেখা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য পেন্টাগন এখন ‘গোল্ডেন ডোম’ নামে পরিচিত মহাদেশীয় নতুন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণে জোর দিয়েছে।
ফিলিপাইন এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে, মার্কিন সামরিক প্রকৌশলীরা এখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার দীর্ঘ-অব্যবহৃত বিমান দুর্ঘটনা পুনর্নির্মাণ করছেন।
জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে অনুষ্ঠিত সামরিক মহড়ার ছবি এবং ভিডিওতে দেখা গেছে, মার্কিন বিমান বাহিনীর যুদ্ধ প্রকৌশলীরা ক্ষতিগ্রস্ত রানওয়ে এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগুলি তাৎক্ষণিকভাবে মেরামত করার জন্য বুলডোজার এবং নির্মাণ সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত।
অন্যদিকে, বেইজিং ‘অ্যান্টি-অ্যাক্সেস এরিয়া ডিনায়াল (A2AD)’ অর্থাৎ দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে, যার উদ্দেশ্য মার্কিন যুদ্ধজাহাজ এবং বিমানবাহী রণতরীগুলোকে চীনা জলসীমা থেকে দূরে রাখা।
ওয়াশিংটন টাইমসকে দেওয়া এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলেন, যুদ্ধ শুরু হলে গুয়ামে চীনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হওয়া একেবারে নিশ্চিত। এ কারণে সেখানে ইতিমধ্যেই ৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে সামরিক অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ গুয়ামে থাকা ৬,৪০০ সামরিক কর্মীকে ‘টিপ অব দ্য স্পিয়ার’ অর্থাৎ যুদ্ধের সবচেয়ে সামনের সারির সৈনিক বলে অভিহিত করেছেন।
নতুন এক রিপোর্ট বলছে, চীনের পক্ষ থেকে তাইওয়ানে সীমিত পরমাণু হামলা হতে পারে যা দেশজুড়ে বড় ধরনের অবকাঠামোগত বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
এছাড়া, উত্তর কোরিয়াও দক্ষিণ কোরিয়ার উপর হামলা করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন সমন্বিত সংঘাত মার্কিন জনগণের জীবনযাত্রা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং খাদ্য সরবরাহে গভীর প্রভাব ফেলবে।
মার্কিন নৌবাহিনীর ভারপ্রাপ্ত প্রধান জেমস কিলবি কংগ্রেসে বলেছেন, ‘মার্কিন অস্ত্র মজুদ যথেষ্ট নয়। যদি চীনের সাথে যুদ্ধ হয়, তা হবে রক্তাক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী। আমাদের প্রচুর গোলাবারুদ লাগবে, এবং সেগুলো আমাদের হাতে থাকতে হবে।’
চীনের সামরিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে তাইওয়ানকে ঘিরে সম্ভাব্য যুদ্ধ শুধু এশিয়ার জন্য নয়, যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও এক বিপুল চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
সামরিক ঘাঁটি, বেসামরিক অবকাঠামো, সাইবার সিস্টেম, এমনকি পরমাণু হামলার প্রস্তুতি সবকিছু মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একটি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা সমগ্র বিশ্বে প্রতিধ্বনি তুলতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :