হামাসকে পরাজিত করতে এবং গাজায় অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘অপারেশন গিডিয়ন্স চ্যারিওটস’ নামে এক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
শনিবার (১৭ মে) প্রতি চার মিনিট পরপর গাজায় এক বার করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। হামলায় এক দিনেই ১৪৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এদিকে, প্রায় ১০ লাখ গাজাবাসীকে লিবিয়ায় স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ বিষয়ে লিবিয়ার শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে খবরে দাবি করা হয়েছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) তাদের হিব্রু ভাষার পরিচালিত এক্স অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে জানিয়েছে, তারা ‘অপারেশন গিডিয়ন্স চ্যারিওটস’ নামে একটি সামরিক অভিযান শুরু করছে। যার লক্ষ্য গাজার কৌশলগত এলাকার দখল নেওয়া।
গাজায় হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার (১৫ মে) থেকে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ২৫০ জন নিহত হয়েছেন।
এক্স অ্যাকাউন্টে দেওয়া পোস্টে ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, যতক্ষণ পর্যন্ত হামাস হুমকি না হয়ে ওঠে এবং তাদের কাছে থাকা সব জিম্মি মুক্ত না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা অভিযান বন্ধ করব না।
তারা জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকায় ১৫০টিরও বেশি ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে’ হামলা চালানো হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, গাজায় পুনরায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু করতে এবং অবরোধ প্রত্যাহারে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ার পরও ইসরায়েল হামলা আরও বাড়িয়েছে এবং সীমান্তে সাঁজোয়া বাহিনীও মোতায়েন করেছে। এরপরই এই অভিযান শুরু হওয়া মানে এতদিনের সব কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার টুর্ক বলেছেন, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক অভিযান আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল হতে পারে।
তিনি বলেন, বাসিন্দাদের জোরপূর্বক স্থানাস্তর, বিভিন্ন এলাকাকে পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করা এবং মানবিক সহায়তা না ঢুকতে দেওয়া সবকিছু মিলে মনে হচ্ছে গাজায় একটি স্থায়ী জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে, যা আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী এবং জাতিগত নিধনের সমতুল্য।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রও এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
এদিকে, প্রায় ১০ লাখ গাজাবাসীকে লিবিয়ায় স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। এই প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবগত পাঁচ মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
পুনর্বাসন পরিকল্পনা সম্পর্কে সরাসরি অবগত তিন কর্মকর্তা বলেন, গাজাবাসীদের স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে মার্কিন প্রশাসন। লিবিয়ার শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছেও বলে তারা দাবি করেন।
তারা আরও বলেন, ফিলিস্তিনিদের গ্রহণে সম্মত হওয়ার বিনিময়ে লিবিয়ার জব্দকৃত বৈদেশিক মুদ্রা ছাড় করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এক দশকেরও বেশি সময় আগে লিবিয়ার শত শত কোটি ডলার আটকে দেওয়া হয়।
তবে দুই পক্ষের মধ্যে এখনো চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন তারা। তাদের দাবি, পুনর্বাসন পরিকল্পনার অগ্রগতি সম্পর্কে অবগত আছে ইসরায়েল।
এনবিসির প্রতিবেদনের দাবিগুলো মোটেই সত্য নয়। এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা কার্যকর করার পরিস্থিতি নেই। বাস্তবতা ভিন্ন। এমন অর্থহীন কোনো পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনাও হয়নি বলে দাবি করেছেন মার্কিন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা।
হামাসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাসেম নাইম বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের লিবিয়ায় পুনর্বাসনের কোনো পরিকল্পনা নিয়ে তারা অবগত নন।
তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিরা তাদের মাতৃভূমির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। তারা এই ভূমির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং নিজেদের জমি, পরিবার, সন্তানদের ভবিষ্যৎ রক্ষায় শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে ও যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত।