স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত সরকার। ফলে দুই দেশের বাণিজ্যে ‘ব্যাপক প্রভাব’ পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। ধারণা করা হচ্ছে প্রভাব পড়তে পারে কূটনৈতিক সম্পর্কেও।
ভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ‘এই বিধিনিষেধগুলো দেখে মনে হচ্ছে, ঢাকা বিপুলসংখ্যক ভারতীয় পণ্যের আমদানি সীমিত করেছে এবং চীনের দিকে কূটনৈতিকভাবে ঝুঁকেছে, তারই জবাবে ভারত এই পদক্ষেপ নিয়েছে।’
এছাড়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা চীন সফরে গিয়ে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে ‘সমুদ্রপথে যোগাযোগের সুযোগবিহীন একটি স্থলবেষ্টিত অঞ্চল’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
ভারতের গতকালকের এই সিদ্ধান্ত সেটিরও প্রতিক্রিয়া বলছে বাণিজ্যবিষয়ক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)।
ভারতীয় সংবাদমাদ্য এই সময় জানায়, নয়াদিল্লির এই পদক্ষেপকে প্রতিশোধ হিসেবে বিবেচনা করছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী মহল। কারণ ২০২৪ সালের শেষভাগ থেকে বাংলাদেশ ভারতীয় রপ্তানির ওপর একের পর এক বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল।
এর মধ্যে রয়েছে- এপ্রিল থেকে প্রধান স্থলবন্দরগুলোর মাধ্যমে ভারতীয় সুতা আমদানি নিষিদ্ধকরণ, চাল আমদানির ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ, কাগজ, তামাক, মাছ ও গুঁড়া দুধের আমদানি নিষেধাজ্ঞা।
জিটিআরআই বলছে, ভারতের এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ৭৭০ মিলিয়ন ডলারের পণ্যের ওপর প্রভাব পড়বে। যা দুই দেশের মোট বাণিজ্যের ৪২ শতাংশ। তবে পণ্য নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সীমান্তের ওপারে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা কী বলছেন?
পণ্য আমদানি বন্ধ হলে স্থলবন্দরের সঙ্গে যুক্ত পোর্টার, শ্রমিকদের উপর কিছুটা প্রভাব পড়বে, তবে বাংলাদেশকেও একটা বার্তা দেওয়া প্রয়োজন ছিল বলছেন বনগাঁ পেট্রাপোলের ব্যবসায়ীরা।
পেট্রাপোল আন্তর্জাতিক ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ‘বাংলাদেশকে একটা বড় বার্তা দেওয়া হলো। আমরা যেন বাংলাদেশের কাছে একটা ভিলেন হয়ে গিয়েছি। যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, আমাদের রাষ্ট্র নেতারা সাহায্য করেছিলেন। আজকে তার কোনও মূল্যায়ন আমাদের কাছে নেই। ভারতের বিরুদ্ধে যে প্রচার হচ্ছে বাংলাদেশে, সেটার জন্যেই ব্যবসায় প্রভাব পড়ে।’
কেন্দ্রের পক্ষ থেকে শনিবার (১৭ মে) বন্দর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। সেখানেই জানিয়ে দেওয়া হয়, রেডিমেড পোশাক, প্যাকেট জাতীয় পানীয়, কাঠের আসবাবপত্র-সহ কিছু সামগ্রী স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে না। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পেট্রাপোল দিয়ে বাংলাদেশ থেকে যা আমদানি হয়, তার মধ্যে ৪০ শতাংশই হয় রেডিমেড পোশাক।
পেট্রাপোল ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ কুমার দে জানান, বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর ব্যবহার করে সারাদিনে যা গাড়ি ঢোকে ভারতে তার প্রায় ২৫ শতাংশ গাড়ি পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে আসে। পেট্রাপোল দিয়ে পোশাক-সহ বেশ কিছু প্যাকেটজাত খাদ্য সামগ্রী, প্লাস্টিকের সামগ্রী আসে বাংলদেশ থেকে। এসব পণ্য আমদানি বন্ধ করে বাংলাদেশে আর্থিক প্রভাব পড়বে বলেই জানাচ্ছেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :