ঢাকা মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা পরমাণু প্রস্তাব দেবে ইরান

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ৯, ২০২৫, ০৮:৫২ পিএম
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি। ছবি- সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক প্রস্তাবকে ‘দায়সারা’ ও ‘অস্পষ্ট’ বলে প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে ইরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকায়ি সোমবার (০৯ জুন) গণমাধ্যমে বলেন, এই প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘একটি সুযোগ’, যা তাদের ‘মূল্যায়ন করা উচিত’। 

তবে এর পাশাপাশি তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে যদি আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) যদি কঠোর পদক্ষেপ নেয়, তাহলে তারা কোনো সহযোগিতা করবে না।

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নতুন পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে গত এপ্রিল থেকে পাঁচ দফা আলোচনা হয়েছে। ২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প আগের চুক্তি থেকে সরে আসার পর নতুন সমঝোতার খসড়া নিয়ে চলছিল টানাপোড়েন। 

এর আগে, গত ৩১ মে পরমাণু চুক্তির প্রস্তাব ইরানের হাতে তুলে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ইরান দাবি করে, এতে আগের আলোচনার ধারা যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি, বরং কিছু বিষয়ে ‘অস্পষ্টতা’ রয়েছে।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, প্রস্তাবটি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বিষয়টি স্পষ্ট করেনি, যা ইরানের ‘মূল দাবি’। দেশটির স্পিকারও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে নিষেধাজ্ঞা তোলার উল্লেখ না থাকাটা ‘অগ্রহণযোগ্য’।

ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার পর ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতিতে ফিরে এসেছেন এবং হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তিনি ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অনুমতি দেবেন না।

তবে ইরান বলে আসছে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ তার ‘অপরিহার্য অধিকার’ এবং এটি ‘কোনো দর কষাকষির বিষয় নয়’। 

বর্তমানে তারা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা ২০১৫ সালের চুক্তির নির্ধারিত সীমা ৩.৬৭ শতাংশের অনেক গুণ বেশি। যদিও এখনো তা ৯০ শতাংশের নিচে, যা একটি পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে প্রয়োজন।

এমন উত্তেজনার মধ্যে ১০ জুন ভিয়েনায় শুরু হয়েছে জাতিসংঘ পারমাণবিক সংস্থা আইএইএ-র বোর্ড সভা। সেখানে সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রসি বলেন, ইরানের সহযোগিতা এখনো ‘অসন্তোষজনক’ এবং ‘পুরনো কিছু গোপন তথ্যের’ ব্যাখ্যা দিতে তারা ব্যর্থ।

জাতিসংঘ পারমাণবিক সংস্থা আইএইএ-র প্রধান রাফায়েল গ্রসি। ছবি- সংগৃহীত

তার ভাষায়, ‘যতক্ষণ না ইরান সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করছে, ততক্ষণ তাদের কর্মসূচি আদৌ শান্তিপূর্ণ কি না, তা নিশ্চিত করা যাবে না’।

এই অবস্থায় আইএইএ-তে ইরানবিরোধী একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপনের কথা ভাবছে ২০১৫ সালের চুক্তির ইউরোপীয় স্বাক্ষরকারী যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি। 

এই প্রস্তাব যদি গৃহীত হয়, তাহলে ইরানকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের ‘স্ন্যাপব্যাক’ প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়ে যেতে পারে, যার সময়সীমা অক্টোবরেই শেষ হচ্ছে।

ইসমাইল বাকায়ি বলেন, প্রস্তাবটি পাস হলে ইরান ‘এই কৌশলগত ভুলের’ জবাব দিতে প্রস্তুত। তার কথায়, ‘মুখোমুখি অবস্থানের জবাবে কখনোই বাড়তি সহযোগিতা করা হবে না’। 

এটি স্পষ্ট ইঙ্গিত যে, পশ্চিমা শক্তির চাপে ইরান বরং আরও কঠোর পথে হাঁটবে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ছবি- সংগৃহীত

অন্যদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবকে ‘স্বাধীনতা ও আত্মনির্ভরতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী’ বলে মন্তব্য করেন। 

তিনি বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইরানের ‘মূল ভিত্তি’, আর যুক্তরাষ্ট্রের এতে ‘বক্তব্যের কোনও অধিকার নেই’।

এই অবস্থায় ওমানের মাধ্যমে শিগগিরই নিজেদের ‘যুক্তিসম্মত ও ভারসাম্যপূর্ণ’ পাল্টা প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পাঠাবে ইরান, যা ঘিরে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে পারমাণবিক রাজনীতির অঙ্গনে।

সূত্র : আল-জাজিরা, ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর, ডন