গাজার পথে মানবিক ত্রাণ নিয়ে রওনা হওয়া ‘ম্যাডলিন’ নামের জাহাজটি আন্তর্জাতিক জলসীমা থেকে জোর করে ইসরায়েলের আশদাদ বন্দরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে। জাহাজে থাকা সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ আটকের পর জাহাজ থেকেই একটি ভিডিও বার্তা শেয়ার করেছেন।
এই বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্তর্জাতিক জলসীমায় আটকে দেওয়া হয়েছে। দখলদার ইসরায়েল কিংবা তাদের সমর্থন জোগানো বাহিনী আমাদের অপহরণ করেছে।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এই ভিডিও শেয়ার হতেই তা ভাইরাল হয়।
ইতালি থেকে যাত্রা শুরু করা জাহাজটি ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের উদ্যোগে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ত্রাণ পৌঁছাতে যাচ্ছিল। জাহাজে ছিলেন সাংবাদিক, চিকিৎসক ও মানবাধিকারকর্মীসহ মোট ১৩ জন।
তাদের মধ্যে ছিলেন আলজাজিরার সাংবাদিক ওমর ফায়াদ, ফরাসি চিকিৎসক বাপতিস্ত আন্দ্রে, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য রিমা হাসান এবং ব্রাজিলিয়ান কর্মী থিয়াগো অ্যাভিলা।
ইসরায়েলের দাবি, এটি ছিল তথাকথিত ‘সেলফি জাহাজ’। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সব ক্রু নিরাপদে আছে, নাটক এখানেই শেষ।’
কিন্তু বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি। ইসরায়েলের এই অভিযান এবং আটককৃতদের ভিডিও প্রকাশকে আন্তর্জাতিক আইনের চরম লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
মার্কিন রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আদিল হক বলেন, ‘এই ধরনের অপমানজনক আচরণ যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।’
মুসলিম অধিকার সংগঠন সিএআইআর জানায়, ‘ম্যাডলিন’ জাহাজে অভিযান ছিল রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক প্রতিনিধি ফ্রানচেসকা আলবানিজে বলেন, ‘গাজার ওপর ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ অবৈধ, তাদের সহায়তা করা উচিত।’
তিনি জানান, অভিযানের সময় জাহাজের ক্যাপ্টেনের সঙ্গে তার শেষ যোগাযোগে জানানো হয়, ‘আরেকটি নৌকা আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।’ এরপরই বন্ধ হয়ে যায় যোগাযোগ।
ঈদুল আজহার মধ্যেও গাজায় থামছে না ইসরায়েলি আগ্রাসন। রবিবার ঈদের তৃতীয় দিনও চালানো হয় ব্যাপক হামলা। আনাদোলু এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় মারা গেছেন অন্তত ১০৮ জন, আহত হয়েছেন আরও ৩৯৩ জন।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৫৪ হাজার ৮৮০ ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন ১ লাখ ২৬ হাজারেরও বেশি মানুষ।
ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা বহু মানুষ এখনো উদ্ধারের অপেক্ষায়। হামলা অব্যাহত থাকায় উদ্ধারকর্মীরাও পৌঁছাতে পারছেন না সব এলাকায়।
এই মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেই বিশ্বজুড়ে আলোচনায় উঠে এসেছে ‘ম্যাডলিন’ অভিযানের ঘটনা এবং গ্রেটা থুনবার্গের বার্তা