ইসরায়েলের আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ সাম্প্রতিক সময়ে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মুখে নতুন করে আলোচনায় এসেছে। তেল আবিবের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তরে ইরানের হামলার পর অনেকের মনেই প্রশ্ন-কীভাবে কাজ করে এই আয়রন ডোম? কেনইবা বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও মাঝে মাঝে ব্যর্থ হয়?
আয়রন ডোম একটি মোবাইল আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা স্বল্প-পাল্লার রকেট, আর্টিলারি শেল ও ড্রোন শনাক্ত ও ধ্বংস করতে সক্ষম। এটি মূলত তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত:-
১. রাডার সিস্টেম শত্রুর ছোড়া রকেট শনাক্ত করে।
২. ব্যাটল কন্ট্রোল সিস্টেম সিদ্ধান্ত নেয় কোন ক্ষেপণাস্ত্র জনবসতিতে আঘাত হানতে পারে।
৩. জনবসতিতে আঘাত হানার আশঙ্কা থাকলে ‘তামির’ নামের ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে আকাশেই ধ্বংস করে দেয়।
কখন ব্যবহার করা হয়, কখন নয়?
আয়রন ডোমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এটি বিশ্লেষণ করে যে শত্রু ক্ষেপণাস্ত্রটি যদি জনশূন্য বা নিরাপদ এলাকায় পড়তে যাচ্ছে, তবে সেটিকে আটকানোর প্রয়োজন হয় না। ফলে খরচ বাঁচানো সম্ভব হয়।
ইতিহাস ও নির্মাণ
২০১১ সালে ইসরায়েলের নিজস্ব প্রতিরক্ষা কোম্পানি ‘রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস’ যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় এই সিস্টেমটি তৈরি করে। মূলত ফিলিস্তিনের হামাস বাহিনীর ছোড়া রকেট ঠেকানোর জন্য এটি নির্মিত হয়েছিল।
জেরুজালেম ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড সিকিউরিটির গবেষক উজি রবিন জানান, একসাথে অনেকগুলো ক্ষেপণাস্ত্র এলে আয়রন ডোম সেই অনুযায়ী ক্ষেপণাস্ত্র বাছাই করে বাধা দেয়। প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসে আয়রন ডোম মাত্র ১০ সেকেন্ড সময় নেয়।
২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের কয়েক হাজার রকেট নিক্ষেপের ৯০ শতাংশই প্রতিহত করে এই সিস্টেম।
কত দূরত্ব পর্যন্ত কার্যকর?
প্রথমদিকের আয়রন ডোমগুলো ৪ থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত কাজ করত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়ন ঘটিয়ে এখন এটি প্রায় ১০০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধে কার্যকরভাবে শত্রু মিসাইল শনাক্ত ও ধ্বংস করতে পারে।
প্রতিটি ব্যাটারি ১৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি শহরকে সুরক্ষা দিতে পারে।
খরচ ও কার্যকারিতা
প্রতিটি ‘তামির’ ক্ষেপণাস্ত্রের দাম প্রায় ৫০ হাজার ডলার। এটি মার্কিন প্যাট্রিয়ট মিসাইলের তুলনায় অনেক সস্তা হলেও পর্যাপ্ত কার্যকর। তবে শতভাগ নিরাপত্তা দিতে পারে না বলেও জানান নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে দুটি আয়রন ডোম ব্যাটারি কিনেছে। ইউক্রেনও এটি পেতে ইচ্ছুক। তবে ইসরায়েল এখন পর্যন্ত ইউক্রেনকে কেবল মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
ইসরায়েল আয়রন ডোমের সুনির্দিষ্ট অস্ত্রভাণ্ডার সম্পর্কে কখনোই বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গোপনীয়তা নিরাপত্তার অংশ হলেও এর কার্যকারিতা যে বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
তবে সাম্প্রতিক ইরানি হামলায় আয়রন ডোম আংশিক ব্যর্থ হওয়ায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে এ ব্যবস্থার দুর্বল দিক ও হালনাগাদ প্রয়োজনীয়তা।
আপনার মতামত লিখুন :