ঢাকা শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫

গোপনীয়তা কেলেঙ্কারিতে ৮ বিলিয়ন ডলার খেসারত দিল জুকারবার্গের মেটা

রয়টার্স
প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০২৫, ০৩:১৮ এএম
মার্ক জুকারবার্গ ও মেটার লোগো। ছবি- সংগৃহীত

ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গসহ মেটা প্ল্যাটফর্মের বর্তমান ও সাবেক পরিচালক এবং কর্মকর্তারা গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা ৮ বিলিয়ন ডলারের শেয়ারহোল্ডার মামলার নিষ্পত্তিতে সম্মত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ডেলাওয়্যারের একটি আদালতে এই বিষয়ে পক্ষগুলো সমঝোতায় পৌঁছানোর কথা জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী।

মামলাটির অভিযোগ অনুযায়ী, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যর্থ হয়ে মেটা কয়েক বিলিয়ন ডলার জরিমানা গুনেছে। সেই ক্ষতির দায়ভার কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তাদের বহন করা উচিত বলে দাবি করেছিলেন শেয়ারহোল্ডাররা।

ডেলাওয়্যার চ্যান্সারি কোর্টের বিচারক ক্যাথালিন ম্যাককরমিক মামলার দ্বিতীয় দিনেই বিচার স্থগিত করে দেন এবং পক্ষগুলোকে সমঝোতার জন্য অভিনন্দন জানান। তবে সমঝোতার বিস্তারিত শর্ত এখনও প্রকাশ করা হয়নি।

বাদীপক্ষের আইনজীবী স্যাম ক্লোসিক বলেন, ‘চুক্তিটি দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে’। সমঝোতার ফলে মামলার অন্যতম আসামি মেটা পরিচালক ও বিনিয়োগকারী মার্ক অ্যান্ড্রিসেনের বৃহস্পতিবারের সাক্ষ্য বাতিল করা হয়। একইসঙ্গে জুকারবার্গ ও সাবেক প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গের সাক্ষ্যও আর নেওয়া হবে না।

মামলায় অভিযোগ ছিল, ২০১২ সালে ফেসবুক ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশনের (এফটিসি) মধ্যে গোপনীয়তা রক্ষার বিষয়ে যে সমঝোতা হয়েছিল, তা যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন মেটার পরিচালনা পর্ষদ। এই ব্যর্থতার ফলেই ২০১৯ সালে এফটিসি মেটাকে ৫ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করেছিল।

শেয়ারহোল্ডাররা চেয়েছিলেন, ১১ জন প্রাক্তন ও বর্তমান পরিচালক (জুকারবার্গ, স্যান্ডবার্গ ও অ্যান্ড্রিসেনও রয়েছেন) নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পদ দিয়ে কোম্পানির ক্ষতি পূরণ করুন। তবে আসামিরা অভিযোগ অস্বীকার করে একে ‘চরম দাবি’ বলে উল্লেখ করেন।

মেটা এ মামলায় বিবাদী হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিল না এবং প্রতিষ্ঠানটি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে মেটার ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে তারা ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা রক্ষায় বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে।

মামলার মূল পটভূমি তৈরি হয়েছিল কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারির পর, যেখানে লাখ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য রাজনৈতিক পরামর্শক সংস্থাটির হাতে পৌঁছে যায়। সংস্থাটি ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারে কাজ করেছিল।

সমালোচকরা বলছেন, এই সমঝোতা আদালতের জবাবদিহি এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। ডিজিটাল কন্টেন্ট নেক্সট-এর প্রধান নির্বাহী জেসন কিন্ট বলেন, ‘এটি একটি মিস করা সুযোগ, যেখানে ফেসবুকের ব্যবসায়িক মডেল এবং নজরদারি নির্ভরতা আরও স্পষ্টভাবে সামনে আনা যেত।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারিকে কয়েকজন ব্যক্তির বিচ্ছিন্ন কাজ হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও, মূল সমস্যা ফেসবুকের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিতেই নিহিত ছিল। সেই প্রশ্নের এখনও কোনো মীমাংসা হয়নি।’