এক ডেলিভারি রাইডারের মৃত্যুর পর ইন্দোনেশিয়ায় চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মানুষ এই আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাচ্ছেন। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন এবং থাইল্যান্ডের মতো প্রতিবেশী দেশসমূহ গ্র্যাব ও গোজেক অ্যাপের মাধ্যমে খাবার অর্ডার দিচ্ছেন জাকার্তাসহ ইন্দোনেশিয়ার নানা শহরে। অর্ডারকৃত এসব খাবার ডেলিভারি রাইডাররা নিজেদের কাছে রাখছেন কিংবা সহকর্মীদের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন।
সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে।
গত সপ্তাহে ২১ বছর বয়সী গোজেক চালক আফফান কুরনিয়াওয়ান বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের গাড়িচাপায় নিহত হন। ওই ঘটনার পর থেকেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগসহ সহিংসতায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন।
এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে #SEAblings নামে একটি হ্যাশট্যাগ ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষ ইন্দোনেশিয়ার বিক্ষোভকারীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। মূলত খাবার অর্ডার করে ডেলিভারি রাইডারদের উৎসাহ ও সহায়তা করার দিকেই জোর দেওয়া হচ্ছে।
ফিলিপাইনের সেবু দ্বীপের বাসিন্দা ৩৪ বছর বয়সী তারা । সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশে ভ্রমণ করেছেন তিনি, গিয়েছিলেন ইন্দোনেশিয়াতেও । সেখানকার মোটরসাইকেল চালকদের ব্যবহারে মুগ্ধ হন তিনি। তাই তার মনে হয়েছে, ইন্দোনেশিয়ায় মোটরবাইক চালক আফফান কুরনিয়াওয়ানের মৃত্যুর পর তাদের সাহায্য করা উচিৎ, এখন এর একমাত্র উপায় খাবার পাঠানো।তাই তিনি ২ আন্দোলনকারীদের জন্য একবেলা খাবার পাঠিয়েছেন, পাশাপাশি খাবার পানি পাঠিয়েছেন অনেকের জন্য। ফিলিপিনোদেরও এই উদ্যোগে যুক্ত হতে তিনি তাগালগ ভাষায় একটি নির্দেশনা ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাকার্তার এক ডেলিভারি রাইডার তৌফিক সম্প্রতি সিঙ্গাপুর থেকে পাঠানো খাবারের অর্ডার পেয়েছেন। তিনি বলেন, বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে অর্ডার অনেক কমে গেছে। তাই এই সহায়তা আমাদের জন্য খুব দরকারি। খাবারও পাওয়া গেলো, আবার সহমর্মিতাও পেলাম।
মালয়েশিয়ার ২১ বছর বয়সী শিক্ষার্থী আয়মান হরিজ মুহাম্মদ আদিব। ইন্দোনেশিয়ার মানুষের ঐক্য ও সাহস দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন তিনি। তারা প্রমাণ করেছে যে সাধারণ মানুষেরও ক্ষমতা আছে। যখন অন্যায় বাড়ে, তখন একসঙ্গে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক ডেলিভারি চালক কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ও সিঙ্গাপুরের এক অর্ডারকারীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, আজ অনেকেই এমন অর্ডার দিয়েছেন, যেখানে লেখা ছিল খাবার পৌঁছে না দিয়ে চালকেরা নিজেরাই খেয়ে নিন বা ভাগ করে নিন। আমি এখন আমার খাবার সহকর্মীদের সঙ্গে ভাগ করে নেবো।
গ্র্যাব জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার বাইরে বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়া থেকে অর্ডারের পরিমাণ বেড়েছে। যদিও মোট কতজন এতে অংশ নিয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়।
প্রসঙ্গত, ইন্দোনেশিয়ার সড়কে প্রায় ১৫ লাখ ফুলটাইম ও পার্টটাইম ডেলিভারি চালক রয়েছেন। তারা সবুজ ইউনিফর্ম পরে গ্র্যাব ও গোজেকের হয়ে খাবার, মুদি সামগ্রী বা যাত্রী পরিবহন করেন।
সংসদ সদস্যদের বাড়তি ভাতা ও বাড়ি ভাড়ার বরাদ্দ নিয়ে ক্ষোভ থেকে গত ২৫ আগস্ট জাকার্তায় প্রথম বড় বিক্ষোভ হয়। তবে আফফান কুরনিয়াওয়ানের মৃত্যু আন্দোলনকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়। পরে প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো ও পুলিশপ্রধান দুঃখপ্রকাশ করেন ও কিছু ভাতা কমানোর ঘোষণা দেন। তবু বিক্ষোভ থামেনি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন