জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনে হামাসমুক্ত সরকার গঠনের পক্ষে ভোট দিয়েছে। গাজা যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের অংশ হিসেবে এই সমঝোতা প্রস্তাব তৈরি করা হয়, যেখানে আরব দেশগুলো ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের প্রতি আরও স্পষ্টভাবে নিন্দা জানায়, পাশাপাশি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সমর্থন দেয়। সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার অনুষ্ঠিত ভোটে ১৪২টি দেশ পক্ষে, ১০টি বিপক্ষে এবং ১২টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। এর মধ্যে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, হাঙ্গেরি ও আর্জেন্টিনা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়। ফ্রান্স ও সৌদি আরবের যৌথ উদ্যোগে জুলাইয়ে তৈরি হওয়া এই প্রস্তাবটি ‘নিউ ইয়র্ক ঘোষণা’ নামে পরিচিত। এতে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের আহ্বান জানানো হয় এবং হামাসের প্রতি জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে কঠোর সমালোচনা করা হয়।
ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘আমরা ৭ অক্টোবর বেসামরিকদের ওপর হামাসের হামলাকে নিন্দা জানাই। হামাসকে গাজায় আটক সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে।’
এ ঘোষণাকে আগামী সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বিষয়ক একদিনের সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। সেই সম্মেলনে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেবে বলে জানিয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার বলেছেন, ইসরায়েল কখনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে মেনে নেবে না। বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
জার্মানি ও ইতালি ইউরোপের বড় দুটি দেশ যারা এখনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়নি, যদিও ইতালির জোট সরকারে এ বিষয়ে মতবিরোধ বাড়ছে। ইতোমধ্যে পাঁচটি ইউরোপীয় দেশ অবৈধ ইসরায়েলি বসতি থেকে সব ধরনের আমদানি নিষিদ্ধ করেছে।
ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘গাজা যুদ্ধের অবসানের প্রেক্ষাপটে হামাসকে উপত্যকায় কর্তৃত্ব ত্যাগ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র হস্তান্তর করতে হবে।’
হামাস জানিয়েছে, সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হলে তারা অস্ত্র ত্যাগ করবে না।
এর আগে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ কাতারে হামাস নেতাদের ওপর বিমান হামলার নিন্দা জানিয়েছিল, যদিও ইসরায়েলের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
কাতার, তুরস্ক বা মিসরে হামাস নেতাদের ওপর আর আক্রমণ না চালানোর নিশ্চয়তা চাইবে কাতারি কূটনীতিকরা। ট্রাম্প বলেছেন, ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডে তিনি সন্তুষ্ট নন, তবে হামাসকে সরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টাকে তিনি স্বাগত জানান।
রোববার দোহায় আরব-ইসলামি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করছে কাতার, যেখানে ইসরায়েল নিয়ে আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া আলোচনায় থাকবে। এদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওপর আব্রাহাম চুক্তি (২০২০ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সহযোগিতা চুক্তি) স্থগিতের চাপ বাড়ছে।
শুক্রবার ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে ডেকে হামাস নেতাদের ওপর হামলায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আমিরাত।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক ড. আনোয়ার গারগাশ বলেন, ‘এই বেপরোয়া আগ্রাসী পদক্ষেপগুলো শান্তি, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার যৌথ লক্ষ্যকে এগিয়ে নেবে না। বরং এগুলো আরও সহিংসতা, উগ্রবাদ ও বিশৃঙ্খলার জন্ম দেবে।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন