সম্প্রতি মার্কিন বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মেটার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, যা শুনে যেকোনো অভিভাবকই উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত হয়ে পড়তে পারেন। ইংল্যান্ডের এক ৩৭ বছর বয়সি ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছেন, তার ফিডে মেটা বারবার এমন কিছু পোস্ট প্রদর্শন করেছে যেখানে স্কুলড্রেস পরিহিত অল্পবয়সি মেয়েদের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
ওই ব্যবহারকারীর দাবি, এসব ছবির সঙ্গে যুক্ত ছিল মেটার নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘থ্রেডস’ ব্যবহারে উৎসাহিত করার আহ্বান। ছবিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে তার উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে। প্রায় প্রতিটি ছবিতেই কিশোরীদের মুখমণ্ডল ও নাম স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল, যা তার কাছে অত্যন্ত অস্বস্তিকর মনে হয়েছে।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানায়, অভিযোগটি প্রকাশ্যে আসার পর মেটার কার্যক্রম নিয়ে অভিভাবক ও সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, এটি শুধু অবাঞ্ছিত নয়, বরং শিশুদের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি। এটি অশালীন ইঙ্গিত বহন করে এবং শিশুদের ছবি ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার করাটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
অভিযোগে বলা হয়েছে, স্কুলে ফেরার মুহূর্তকে কেন্দ্র করে অনেক মা–বাবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের কন্যাসন্তানের ছবি পোস্ট করেছিলেন। এর মধ্যে কেউ কেউ তাদের অ্যাকাউন্ট ব্যক্তিগত রাখলেও সেই ছবিগুলো থ্রেডস প্ল্যাটফর্মে গিয়ে প্রকাশ্যে চলে যায়। আবার অনেকে খোলা অ্যাকাউন্ট থেকেই ছবি প্রকাশ করেছিলেন। পরবর্তীতে সেসব ছবিই মেটা ‘সাজেস্টেড থ্রেডস’ হিসেবে অন্য ব্যবহারকারীদের সামনে তুলে ধরে।
এ প্রসঙ্গে এক অভিভাবক জানান, তার মেয়ের স্কুল ইউনিফর্ম পরা একটি ছবি ব্যবহার করে একটি বড় ‘গেট থ্রেডস’ বাটনসহ প্রমোশন চালানো হয়েছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি কখনো কল্পনাও করিনি, আমার মেয়ের এমন একটি সাধারণ ছবি এভাবে ব্যবহার হতে পারে। এটা শুধু বিব্রতকর নয়, আমার কাছে পুরো বিষয়টি জঘন্য লেগেছে।’
আরেকজন মা অভিযোগ করে বলেন, তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে মাত্র কয়েকশ’ ফলোয়ার থাকলেও মেয়ের স্কুল ইউনিফর্ম পরা ছবিটি প্রায় সাত হাজারবার দেখা হয়েছে এবং দর্শকদের বেশির ভাগই ছিলেন অপরিচিত পুরুষ।
অন্যদিকে, যিনি এসব পোস্ট নিজের ফিডে দেখেছেন, তিনি জানান, ‘আমি আগে কখনো এ ধরনের ছবি খুঁজিনি বা লাইক দেইনি। তারপরও আমার ফিডে এমন কনটেন্ট এসেছে। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, বিষয়টি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে।’
এ ঘটনার পেছনে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিশুর অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা বিখ্যাত অধিকারকর্মী বিবান কিডরন। তিনি বলেন, ‘স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের ছবি দিয়ে যখন একটি পণ্যের বিজ্ঞাপন চালানো হয়, তখন তা কেবল ভুল নয়, বরং শিশুর নিরাপত্তাকে সরাসরি উপেক্ষা করা হয়। মেটা কেবল নিজেদের মুনাফার কথা ভাবে, শিশুদের গোপনীয়তা নয়।’
মেটা অবশ্য বলেছে, এসব ছবি তাদের নীতিমালার মধ্যে পড়ে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এগুলো ছিল মা-বাবাদেরই প্রকাশ্যে পোস্ট করা ছবি, যেগুলো ব্যবহার করে তারা থ্রেডস প্ল্যাটফর্ম প্রচার করছে। তবে মেটা এটাও বলেছে, তাদের অ্যালগরিদম সাধারণত টিনএজারদের থ্রেডস পোস্ট কাউকে দেখায় না। কিন্তু যেহেতু এসব ছবি বড়দের অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা হয়েছিল এবং প্রকাশ্য ছিল, তাই সেগুলো দেখানো হয়েছে।
এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফকমকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে। তাদের মতে, শিশুদের ছবি এমনভাবে ব্যবহারের সুযোগ যাতে না থাকে, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশুদের ছবি পোস্ট করার সময় অভিভাবকদের সচেতন থাকার প্রয়োজনীয়তার কথাও সামনে এসেছে এ ঘটনার মাধ্যমে। শিশুর নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষার দায় যেমন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের, তেমনি পরিবারগুলোর পক্ষ থেকেও হতে হবে প্রয়োজনীয় সতর্কতা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন