সাধারণ অধিবেশনের ভাষণে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থতার জন্য জাতিসংঘকে দায়ী করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) উদ্বোধনী অধিবেশনে জাতিসংঘকে নিয়ে উপহাস করার পাশাপাশি সংস্থাটির বিরুদ্ধে অবৈধ অভিবাসন উৎসাহিত করার অভিযোগ করেছেন তিনি। বলেন, ‘‘জাতিসংঘ পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর অভিবাসনের মাধ্যমে একধরনের ‘আক্রমণ’ চালাচ্ছে, যা দেশগুলোকে ‘ধ্বংসের পথে’ নিয়ে যাচ্ছে।’’
বৈশ্বিক ওই মঞ্চে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রচেষ্টারও তীব্র সমালোচনা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগকে ‘বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেন তিনি।
ভাষণে ‘জাতিসংঘের উদ্দেশ্য আসলে কী?’ প্রশ্ন করেন ট্রাম্প। বলেন, তাদের যা করতে দেখা যায় তা হলো, কেবল কড়া ভাষায় লেখা চিঠি পাঠানো। এসব ফাঁকা বুলি, আর ফাঁকা বুলি দিয়ে যুদ্ধ থামানো যায় না।
৭৯ বছর বয়সি ট্রাম্প নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের ভাঙা লিফট ও টেলিপ্রম্পটার নিয়েও অভিযোগ করেন। বলেন, ‘জাতিসংঘের কাছ থেকে আমি যে দুটি জিনিস পেয়েছি, তা হলো একটি ভাঙা লিফট এবং একটি খারাপ টেলিপ্রম্পটার।’
ট্রাম্প তার ভাষণে সাতটি যুদ্ধ বন্ধ করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন বলেও দাবি করেন। তবে দুটি বড় সংঘাতের সমাধানে কোনো সাফল্য পাননি বলে স্বীকার করেন তিনি। এই দুই সংঘাত হলো, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর শুরু হওয়া ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধ। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র কয়েকটি দেশের ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ‘হামাসের নৃশংস কর্মকাণ্ডের পুরস্কার’ হিসেবে অভিহিত করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ না করায় ইউরোপীয় মিত্রদের পাশাপাশি চীন ও ভারতকে নিয়ে সমালোচনা করেন ট্রাম্প। যদিও রাশিয়ার বিরুদ্ধে তুলনামূলক নরম সুরে কথা বলে দেশটির বিরুদ্ধে অনির্ধারিত কিছু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছেন তিনি।
বক্তৃতায় অভিবাসন ইস্যুতে সবচেয়ে কঠোর ভাষার ব্যবহার করেছেন ট্রাম্প। জাতিসংঘকে অভিযুক্ত করে তিনি বলেন, এই সংস্থাটি ‘পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে আক্রমণে অর্থায়ন করছে।’
ট্রাম্প বলেন, ‘উন্মুক্ত সীমান্তের এই ব্যর্থ পরীক্ষা শেষ করার সময় এসেছে। আপনাদের দেশগুলো ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। এ সময় তিনি যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের প্রথম মুসলিম মেয়র সাদিক খানের বিরুদ্ধেও আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন।’
ধ্বংস ডেকে আনছে
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হয়েছে একের পর এক জাতীয়তাবাদী নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে, যা বিশ্বের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অনেকাংশে কমিয়ে দিয়েছে।
বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সহায়তা হ্রাস বিশ্বের জন্য ধ্বংস ডেকে আনছে। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আমরা কোন ধরনের বিশ্ব বেছে নেব? অপ্রচলিত শক্তির বিশ্ব, নাকি আইনের শাসনের বিশ্ব?’
ইউক্রেন ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে ট্রাম্পের। গত বছরের ১৫ আগস্ট আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের পর দ্বিতীয়বারের মতো তাদের এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ওই বৈঠক রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা বিশ্বের চাপ কিছুটা কমালেও ইউক্রেন সংকটে কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।
ট্রাম্প বারবার দাবি করে আসছেন, রাশিয়া-ইউক্রেনের মাঝে চলা দীর্ঘ যুদ্ধ শিগগিরই বন্ধ করতে সক্ষম তিনি। তবে গত এক মাসে ইউক্রেনে হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া এবং ন্যাটোর সদস্য পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া ও রোমানিয়ার আকাশসীমায় ড্রোন কিংবা বিমান প্রবেশ করিয়ে আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে।
গত সপ্তাহে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন আমাকে সত্যিই হতাশ করেছেন।’
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে আর্জেন্টিনার ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মাইলির সঙ্গে ট্রাম্পের নির্ধারিত একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। মাইলির সরকারকে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
মঙ্গলবার অধিবেশনের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে জাতিসংঘের সদরদপ্তর এবং আশপাশের এলাকা ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। এ সময় যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে নিউইয়র্ক পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিস বলেছে, তারা একটি ‘টেলিযোগাযোগ ষড়যন্ত্র’ ব্যর্থ করে দিয়েছে।
সিক্রেট সার্ভিস বলেছে, ১ লাখেরও বেশি মোবাইল সিমকার্ড নিয়ে তৈরি একটি বিশেষ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে জাতিসংঘের আশপাশের যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল করার পরিকল্পনা ছিল। এতে একটি রাষ্ট্রের সমর্থিত কিছু গোষ্ঠী জড়িত ছিল।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন