ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণ গাজার বাসিন্দাদের শোনানোর নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় (পিএমও)। এ জন্য ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আইডিএফ) সীমান্তের ইসরায়েলি অংশে লাউডস্পিকার স্থাপনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইসরায়েল এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার সকালে গাজাজুড়ে ট্রাকে লাউডস্পিকার বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর ছড়ালেও পরে পিএমও জানায়, ভাষণ সম্প্রচার শুধু ইসরায়েলি সীমান্ত থেকে করা হবে।
পিএমও জানায়, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঐতিহাসিক ভাষণ গাজায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য ইসরায়েলি সীমান্তে ট্রাকে লাউডস্পিকার বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
আরও জানানো হয়, এই উদ্যোগ ‘জনসংযোগ কূটনীতির অংশ’। পাশাপাশি জোর দিয়ে বলা হয়, কোনোভাবেই এ প্রক্রিয়ায় আইডিএফ সেনাদের ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না।
তবে শুরু থেকেই এ পদক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, গাজার ভেতরে প্রবেশ করলে হামাসের আক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে। সেনাদের একজন বলেন, ‘এটা একেবারেই পাগলামি। এর কোনো সামরিক সুবিধা নেই।’
তবুও সেনারা পিএমওর নির্দেশ মেনেই গাজায় নেতানিয়াহুর ভাষণ সম্প্রচারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। শুক্রবার বিকেল ৪টায় ভাষণ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে নেতানিয়াহু মূলত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধিতা করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে এক সামরিক প্রতিবেদক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ লাউডস্পিকারসহ সামরিক যানের ছবি প্রকাশ করে জানিয়েছেন, আইডিএফের ৯৯তম ডিভিশনের সেনারা গাজার উদ্দেশে ভাষণ সম্প্রচারের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এ সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে যুদ্ধরত সেনাদের মায়েদের সংগঠন। তারা অভিযোগ করেছেন, ‘আমাদের ছেলেদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রচারণার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’ একইসঙ্গে সেনাপ্রধান ও দক্ষিণ কমান্ডের জেনারেলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারা বলেছেন, ‘সেনাদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না।’
এছাড়া হামাসের হাতে আটক বেশ কয়েকজন জিম্মির পরিবারও নেতানিয়াহুর উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন। জিম্মি ওমরি মিরানের স্ত্রী লিখেছেন, ‘গাজায় ভাষণ দেওয়ার পরিবর্তে আপনার উচিত জিম্মিদের উদ্দেশে আশার বার্তা পৌঁছে দেওয়া।’ অপর এক জিম্মির মা আনাত অ্যাংগ্রেস্ট বলেছেন, ‘আমার ছেলে মাতানসহ জিম্মিরা হয়তো আপনার ভাষণ শুনতে পাবে। কিন্তু যদি আপনার বার্তা মুক্তির প্রতিশ্রুতি না হয়, তবে তা হবে তাদের প্রতি মানসিক নির্যাতন।’
জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় নিউইয়র্কে জিম্মিদের স্বজন ও হামাস থেকে মুক্তিপ্রাপ্তরা বিক্ষোভ করার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে জিম্মিদের ফেরানোর দাবি জানাবেন।
হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠীর হাতে বর্তমানে গাজায় ৪৮ জন জিম্মি রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৬ জনকে মৃত ঘোষণা করেছে ইসরায়েল, যার মধ্যে ২০১৪ সালে নিহত এক সেনাও রয়েছেন। বাকিরা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের অভিযানে অপহৃত।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন