পাকিস্তানের শোবিজ অঙ্গনের জনপ্রিয় নাম হানিয়া আমির। সম্প্রতি ঢাকায় তার সফর ঘিরে বাংলাদেশেও আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন এই অভিনেত্রী। সানসিল্ক বাংলাদেশের আয়োজনে এক ফ্যাশন ও ব্র্যান্ড ইভেন্টে অংশ নিতে তিনি ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকায় আসেন। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার অবস্থান, ছবি ও ভিডিও ঘিরে শুরু হয় ভক্তদের উচ্ছ্বাস। শেরাটন হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তিনি, আর রোববার একটি ফটোশুটেও অংশ নেন।
হানিয়া আমির শুধু গ্ল্যামার বা রূপের জন্যই নয়, তার জনপ্রিয়তার পেছনে রয়েছে অভিনয়ের বৈচিত্র্য, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রভাব এবং স্বতঃস্ফূর্ত ব্যক্তিত্ব। তিনি রোমান্টিক থেকে সিরিয়াস ড্রামা- সব ধরনের চরিত্রে সাবলীল। বিশেষ করে ‘মেরে হামসাফার’ নাটকের ‘হালা’ চরিত্রে তার অভিনয় পাকিস্তান ও বাংলাদেশে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ‘ইশকিয়া’, ‘আনা’, ‘দিলরুবা’, ‘ফেইরি টেল’-এর মতো নাটকেও তার পারফরম্যান্স প্রশংসিত হয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হানিয়ার উপস্থিতি তাকে ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে গেছে। ইনস্টাগ্রামে তার লাখো ফলোয়ার, এদের কাছে তার ফ্যাশন, বিউটি টিপস, লাইফস্টাইল পোস্ট বেশ জনপ্রিয়। ফেসবুক ও টিকটকে তার নাচ, গান এবং মজার ভিডিওগুলো ভাইরাল হয় সহজেই। এই প্ল্যাটফর্মগুলোয় সক্রিয়তা তার পরিচিতিকে আরও বিস্তৃত করেছে।
হানিয়ার একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো, গ্ল্যামার ও স্বাভাবিক আচরণের দুর্দান্ত মিশেল। মিষ্টি হাসি, প্রাণবন্ত মুখাবয়ব, গালে টোল এবং সহজাত অভিনয় তাকে তরুণদের কাছে ‘ঘরের মেয়ে’ হিসেবে জনপ্রিয় করে তুলেছে। তার ব্যক্তিত্ব যেমন পরিশীলিত, তেমনি মনোমুগ্ধকর। তিনি সৌন্দর্য ও প্রতিভার এক ব্যতিক্রমী সংমিশ্রণ।
বাংলাদেশে হানিয়া আমিরের জনপ্রিয়তা হঠাৎ করে আসেনি। সম্প্রতি বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পাকিস্তানি টিভি সিরিজ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এসব সিরিজের গল্পের সরলতা, অভিনয়ের বাস্তবতা, মেকআপ ও পোশাকের সাদামাটা রুচি বাংলাদেশি দর্শকদের মন ছুঁয়েছে। ‘মেরে হামসাফার’-এর হালা চরিত্রটি অনেক দর্শকের আবেগের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই দেশের সাংস্কৃতিক মিল, ভাষার ঘনিষ্ঠতা এবং পারিবারিক জীবনের সাদৃশ্য এ জনপ্রিয়তায় ভূমিকা রেখেছে।
হানিয়ার ব্যক্তিগত জীবনও কম আলোচিত নয়। ১৯৯৭ সালে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে জন্ম নেওয়া হানিয়া আমির শৈশব ও পড়াশোনার সময় থেকেই মেধাবী ছিলেন। কিন্তু পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার কারণে কলেজে পড়ার মাঝপথে অভিনয়ে আসেন এবং দ্রুতই দর্শকের মন জয় করেন। ২০১৬ সালে ‘জনান’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় তার অভিষেক ঘটে। এরপর নাটক ও সিনেমায় অভিনয় করে নিজের অবস্থান পোক্ত করেন। সম্প্রতি ‘সরদারজি ৩’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন তিনি।
বর্তমানে তিনি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেত্রীদের একজন। ধারাবাহিক নাটকে পর্বপ্রতি তিন থেকে চার লাখ রুপি পারিশ্রমিক নেন। তার মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪৩ কোটি রুপি বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা গেছে।
এক সময় গায়ক আসিম আজহারের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় ছিলেন হানিয়া। তাদের বিচ্ছেদের পর ভারতীয় র্যাপার বাদশাহর সঙ্গে সম্পর্কের গুঞ্জন উঠলেও হানিয়া তা অস্বীকার করে জানান, তারা কেবল বন্ধু। তার ব্যক্তিত্ব এবং সাহসী উত্তর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশংসিত হয়েছে।
হানিয়ার সৌন্দর্য নিয়ে যেমন প্রশংসা আছে, তেমনি রয়েছে বিতর্কও। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মতে, তিনি নাক, ঠোঁট, গালের টোল ও থুতনিতে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছেন। তবে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেরও প্রশংসা করেছেন অনেকে। হানিয়া তার স্কিন কেয়ার রুটিন নিয়ে সচেতন। প্রতিদিন হালকা ক্লিনজার, সানস্ক্রিন, ময়েশ্চারাইজার এবং শিট মাস্ক ব্যবহার করেন। প্রচুর পানি পান এবং সুষম খাবার খাওয়ার মধ্য দিয়ে ত্বক উজ্জ্বল রাখেন। এছাড়া সপ্তাহে দুইবার এক্সফোলিয়েট করে ত্বকের মৃত কোষ দূর করেন তিনি।
চলতি বছরের আইএমডিবি প্রকাশিত বিশ্বের সেরা সুন্দরী অভিনেত্রীদের তালিকায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেন হানিয়া আমির। এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রমাণ করে যে, তিনি শুধু পাকিস্তানেই নয়, সারা বিশ্বে তরুণদের কাছে একজন অনুপ্রেরণা।
সব মিলিয়ে বলা যায়, অভিনয়ের দক্ষতা, ব্যক্তিত্ব, ফ্যাশন সেন্স এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় দাপুটে উপস্থিতি- এই সবকিছুর সংমিশ্রণেই আজ হানিয়া আমির একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছেন। তার ঢাকায় আগমন শুধু একটি ব্র্যান্ড ইভেন্ট নয়, বরং দুই দেশের সাংস্কৃতিক বন্ধনের একটি ইতিবাচক উদাহরণ হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন