নারীদের অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়ন বিষয়ে চলচ্চিত্র চর্চা, প্রদর্শন এবং সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উইমেন্স ফিল্ম সোসাইটি, বাংলাদেশের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের সহযোগিতায় এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ, আগারগাঁও, ঢাকায় ‘নারীর ক্ষমতায়ন ও চলচ্চিত্রে ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে কী-নোট পেপার উপস্থাপন করেন আকতানিন খায়ের তানিন, সভাপতি, উইমেন্স ফিল্ম সোসাইটি, বাংলাদেশ। তাঁর প্রবন্ধে আগামী দিনের চলচ্চিত্রে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পেশাগত জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য এআই প্রযুক্তিতে নারীদের দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
ভবিষ্যতের চলচ্চিত্রে নারীদের শুধু অভিনয়ে নয়, নির্মাণ ও অন্যান্য কারিগরি ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি সরকারের কাছে নারীদের দক্ষতা বিকাশে কর্মশালা আয়োজন এবং নারী নির্মাতাদের জন্য বিশেষ অনুদানের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা বলতে গেলে চলচ্চিত্রকে কেন্দ্রীয় জায়গায় আনতেই হয়।
বাংলাদেশের নারীরা আজ কৃষি, প্রযুক্তি ও ব্যবসাসহ নানা ক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করেছে। কিন্তু চলচ্চিত্র সংস্কৃতিতে, বিশেষ করে সৃজনশীল নেতৃত্বের জায়গায় নারীর অংশগ্রহণ প্রয়োজনের তুলনায় এখনো কম।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের নারীদের এগিয়ে আসা উচিত চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করতে। নারী সংবেদনশীল, তাঁদের একটি আলাদা ‘থার্ড আই‘ আছে। নারী সূক্ষ্মভাবে দেখতে পারে। আমরা জানি, নারী মাতৃজাতি; তাঁদের দেখার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা।
ফলে নারী যখন তাঁর সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, তখন তা হয়ে ওঠে আরও সুন্দর, আবেগময় এবং অন্তর থেকে মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে যায়। তাই চলচ্চিত্রে নারীর অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।’
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নূরসিয়া কামাল, যুগ্মসচিব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়; বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের পরিচালক ফারহানা রহমান এবং জনপ্রিয় নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা নার্গিস আখতার।
নার্গিস আখতার তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘গত তিরিশ বছর ধরে আমি নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে কথা বলছি। চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে আমি প্রথম নারী নির্মাতা হিসেবে কাজ শুরু করেছি। তখন অন্যদের মতো পুরুষ সহকর্মীদের সহায়তার সুযোগ ছিল না, যাঁদের ওপর ভর করে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যেত।
শুটিংয়ে নারীদের ওপর প্রাধান্য বিস্তার সামাজিকভাবে স্বাভাবিক মনে করা হলেও আমাকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি।’
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন উইমেন্স ফিল্ম সোসাইটি, বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ডালিয়া কোরায়শী এবং যুগ্ম মহাসচিব উম্মে সালমা উষা। সংগঠনের পক্ষ থেকে অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।
সেমিনারে চলচ্চিত্র শিল্পের বিভিন্ন শাখার শিল্পী ও কলাকুশলীরা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠান শেষে নার্গিস আখতার পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘চার সতিনের ঘর’ প্রদর্শন করা হয়। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সৈয়দা ফারজানা জামান রুম্পা।


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন