ভেনেজুয়েলার গণতন্ত্রপন্থি বিরোধীদলীয় নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো নোবেল শান্তি পুরস্কার নিতে নরওয়েতে গেলে দেশে তিনি ‘পলাতক’ বলেই গণ্য হবেন। ভেনেজুয়েলার অ্যাটর্নি জেনারেল তারেক উইলিয়াম সাব বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) একথা বলেছেন।
মাচাদো গ্রেপ্তারি এড়াতে মাসের পর মাস ধরে ভেনেজুয়েলায় আত্মগোপনে আছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম সাব বলেন, “মাচাদো ষড়যন্ত্র করা, বিদ্বেষ উস্কে দেওয়া এবং সন্ত্রাসবাদে অভিযুক্ত। মাচাদোর বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধের তদন্ত চলার কারণে তিনি ভেনেজুয়েলার বাইরে পা রাখা মাত্রই ‘পলাতক’ হিসাবে বিবেচিত হবেন।
ভেনেজুয়েলায় বাড়তে থাকা কর্তৃত্ববাদের মুখে প্রতিরোধ এবং গণতন্ত্রের জন্য লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে ওঠা ৫৮ বছর বয়সী মারিয়া কোরিনা মাচাদো এবছরের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন এ বছর। আগামী ১০ ডিসেম্বর পুরস্কার গ্রহণের জন্য নরওয়ের অসলোতে যেতে চান তিনি। কিন্তু সেটি করলে এখন তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘পলাতক’ ঘোষিত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বেন।
মাচাদো দীর্ঘদিন ধরেই ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো সরকারকে অপরাধী বলে সমালোচনা করে আসছেন এবং এই সরকারকে উৎখাত করতে ভেনেজুয়েলাবাসী এক হওয়ার ডাক দিয়েছেন।

বিশ্বের অন্য অনেক দেশও ভেনেজুয়েলায় মাদুরোর শাসনকে অবৈধ হিসাবেই দেখে। ভেনেজুয়েলার অ্যাটর্নি জেনারেল মাচাদোর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগের কথা বলেছেন সেগুলোকে মাদুরো সরকারের রাজনৈতিক অস্ত্র বলেই দাবি মাচাদোর সমর্থকদের।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর কঠোর শাসনের বিরোধিতায় মাচাদো এক গুরুত্বপূর্ণ মুখ এবং নির্ভীক এক কর্মী। জনগণের কাছে যার আবেদন একজন রক-স্টারের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। ৫৮ বছর বয়সী মাচাদো ভেনেজুয়েলার ‘লৌহ মানবী’ হিসেবেও পরিচিত।
২০১০ সালে মাচাদো রেকর্ড সংখ্যক ভোট পেয়ে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে তৎকালীন প্রশাসন তাকে পদচ্যুত করে । তার আগ পর্যন্ত তিনি পদে ছিলেন।
২০২৩ সালে বিরোধীদলীয় প্রাইমারি নির্বাচনে ৯২ শতাংশ ভোটে বিশাল জয় পেয়েছিলেন মাচাদো। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ভেনেজুয়েলায় অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মাচাদোর ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। ফলে মাচাদো বিরোধীদলীয় প্রার্থী হিসেবে এডমুন্ডো গঞ্জালেসকে সমর্থন দেন এবং তার পক্ষে প্রচার চালিয়েছিলেন।
তবে ২০২৪ সালে ভেনেজুয়েলার নির্বাচনের ফল নিয়ে নিয়ে ব্যাপক বিরোধ দেখা দেয়। জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে বর্তমান প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর বিরুদ্ধে।
দেশটির নির্বাচন কর্তৃপক্ষ প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকেই জয়ী ঘোষণা করে। তবে বিরোধীরা এই ফল প্রত্যাখ্যান করে। নির্বাচন অবাধ ও সৃষ্ঠু হয়নি বলে এর ফল প্রত্যাখ্যান করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন দেশও।
ভোটের ফল প্রকাশের পর তা বাতিলের দাবিতে তখন ভেনেজুয়েলা জুড়ে বিক্ষোভ হয়। প্রেসিডেন্ট মাদুরো কঠোর হাতে বিক্ষোভ দমন করেন। এতে ২০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়।
সরকারের দমন-পীড়নের মুখে বিরোধী নেতা গঞ্জালেস আত্মগোপনে থাকার পর দেশ ছাড়েন। জীবনের ঝুঁকি থাকায় আত্মগোপনে যেতে হয় মারিয়া কোরিনা মাচাদোকেও। মাচাদো আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হওয়া এবং তার জীবনের ওপর গুরুতর হুমকির পরও দেশে থেকেছেন। তার এই সিদ্ধান্ত লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে বলেই ভাষ্য নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ইয়রগেন ওয়াটনে ফ্রিডনেসের।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন