ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে শান্তি পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করেছেন, তা প্রকাশ্যে আসতেই তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। ফাঁস হওয়া ২৮ দফার এই পরিকল্পনা বিশ্লেষকদের মতে রাশিয়ার প্রায় সব চাওয়া পূরণ করে দিচ্ছে, বিপরীতে আরও কোণঠাসা হয়ে পড়তে পারে ইউক্রেন।
ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা গেছে, ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ২০২২ সালে ইস্তাম্বুলে হওয়া রাশিয়া–ইউক্রেন আলোচনার সঙ্গে উল্লেখযোগ্য মিল রয়েছে। তখন ইউক্রেনের আরও বেশি ভূখণ্ড রাশিয়ার দখলে ছিল এবং যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার সাম্প্রতিক ব্যর্থতাগুলোর কোনো প্রতিফলন এই প্রস্তাবে নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে রাশিয়ার দুটি বড় লক্ষ্য পূরণ হবে।
প্রথমত, প্রস্তাবিত শর্তগুলো এতটাই মস্কো-অনুকূল যে সামান্য অংশ মেনেও রাশিয়া বড় কূটনৈতিক জয় পেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, এই পরিকল্পনাকে সামনে রেখে রুশ কূটনীতিকেরা আলোচনার পাশাপাশি যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কৌশল অব্যাহত রাখতে পারবেন, যুদ্ধক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থানে দাঁড়ালেই তারা চুক্তির দিকে এগোবে।
রাশিয়ার শর্তগুলো- ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ না দেওয়া, ‘নাৎসি ভাবধারা’ নির্মূল, নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং সেনাবাহিনীর আকার কমানো; এই পরিকল্পনায় বহাল রয়েছে। এসব দাবি কার্যত ইউক্রেনের আত্মসমর্পণের সমান বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ছাড়া পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, জব্দ রুশ তহবিল থেকে ১০ হাজার কোটি ডলার ইউক্রেনের পুনর্গঠনে ব্যবহার করা হবে। প্রথম দেখায় এই সিদ্ধান্ত রাশিয়ার জন্য কঠোর মনে হলেও বাস্তবে যেসব এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, সেগুলোর বেশির ভাগই রুশ দখলে। ফলে ইউক্রেনকে পুনর্গঠনের নামে রাশিয়ার শর্ত মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি পরিকল্পনায় রাশিয়ার ওপর আরোপিত সব আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রস্তাবও রয়েছে, যা মস্কোর আরেক বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রস্তাবে আরও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি রয়েছে, যা কিয়েভের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
প্রথমত, চুক্তি স্বাক্ষরের ১০০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের শর্ত- যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতিতে যা প্রায় অসম্ভব এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, পূর্বাঞ্চলীয় দনবাসের কিয়েভ-নিয়ন্ত্রিত অংশগুলোকে ‘অসামরিক অঞ্চল’ ঘোষণা করার প্রস্তাব—যা বিশ্লেষকদের মতে এই অঞ্চল রাশিয়ার হাতে তুলে দেওয়ার শামিল।
তৃতীয়ত, ‘কারণ ছাড়া মস্কো বা সেন্ট পিটার্সবার্গে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হলে চুক্তি বাতিল হতে পারে’—এমন অস্পষ্ট ধারাটি রাশিয়াকে যেকোনো সময় চুক্তি লঙ্ঘনের সুযোগ করে দেবে।
সব মিলিয়ে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনায় কিয়েভ নয়, বরং মস্কোর স্বার্থই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে—এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন