ক’দিন ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই বাড়ছে। হামলা-পাল্টা হামলা চলছে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে। সঙ্গে যোগ দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও।
ফলে সংঘাত মোড় নিয়েছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, পৃথিবী আবারও ধ্বংসলীলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার মধ্যেই ইরানের শীর্ষ নেতাদের পালাক্রমে হত্যা করেই চলেছে ইসরায়েল। সেই সঙ্গে হুমকি দিয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যারও। প্রথমে বিশ্বের দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, তারপর সরাসরি ইসরালি সরকার এবং শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তবে হত্যার হুমকির পরই নিরাপদ স্থানে সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। যদিও এর আগে বহুবার হত্যার হুমকি পেয়েছিলেন এই ধর্মীয় নেতা। সংঘাত, উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও কূটনৈতিক তৎপতার মধ্যেই বিশ্বব্যাপী কৌতূহলী মানুষের চর্চার কেন্দ্রে অবস্থান করছেন খামেনি। মূলত সবসময় তার বাঁ হাতের ব্যবহার নিয়েই প্রশ্ন।
বিশ্বের প্রতিটি মানুষ তার একটি আশ্চর্যজনক শারীরিক বিবরণের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। অনেকেই তার বক্তৃতা ও ছবিতে লক্ষ করেছেন, খামেনি সবসময় একটি হাত ব্যবহার করেন। এর নেপথ্যে কারণ কী?
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনার সূত্রপাত ১৯৮১ সালের ২৭ জুন ইরানের রাজধানী তেহরানে। সেদিন খামেনি আবুজার মসজিদে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। অনুষ্ঠান চলাকালীন এক যুবক তার কাছে একটি টেপ রেকর্ডার রেখেছিলেন।
কিন্তু সেটি আদতে টেপ রেকর্ডার ছিল না। তাতে ছিল একটি বোমা লুকানো। বক্তৃতার মধ্যে হঠাৎ বোমাটি বিস্ফোরণ হয়, গুরুতর আহত হন খামেনি। সেই বোমা হামলার পরেই তার ডান হাত আংশিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এরপর থেকেই জনসমক্ষে বাঁ হাত ব্যবহার করা শুরু করেন।
বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ১৯৮১ সালের বোমা বিস্ফোরণে খামেনি গুরুতর আহত হন। বিস্ফোরণে তার ডান হাত ছাড়াও, ফুসফুস ও কানের স্নায়ুর কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তার বুকের একপাশ পুড়ে যায়। বোমার টুকরো তার শরীরের ডান দিকেও আটকে যায়।
যখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তখন তার অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, একজন ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু অন্য ডাক্তারের দল হাল ছাড়েননি। দীর্ঘ অস্ত্রোপচারের ফলে তার জীবন রক্ষা পায়।
অস্ত্রোপচার শেষে জ্ঞান ফেরার পর খামেনির কথা বলার শক্তি ছিল না। বাঁ হাতে লিখে তিনি প্রথম প্রশ্ন করেন, ‘আমার মসজিদের সব সঙ্গী ঠিক আছেন তো? তাকে জানানো হয় যে সবাই সুস্থ আছেন। এরপরই তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আমার কী হয়েছে?’
ডাক্তাররা তাকে বলেন যে, তিনি ডান হাতটি আর কখনো ব্যবহার করতে পারবেন না। শান্তভাবে খামেনি বলেন, ‘আমার মস্তিষ্ক ও জিভ কাজ করলেই হবে। হাতের দরকার নেই।’
সেদিন থেকে খামেনি তার বাঁ হাত দিয়ে সবকিছু করছেন। তার ডান হাত স্থায়ীভাবে অক্ষম। আজও তিনি সেই আঘাতটি আক্রমণের স্মৃতি হিসেবে বহন করছেন।