বেলারুশ সরকার মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহ করেছে বলে জানিয়েছে অধিকার সংগঠন জাস্টিস ফর মায়ানমার (জেএফএম)। এই সরঞ্জামগুলো মূলত সরকারবিরোধী ড্রোন হামলার বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (২৮ জুন) প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জেএফএম জানায়, বেলারুশ ও মিয়ানমারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য এবং চলমান সামরিক সহযোগিতার তথ্য তারা ফাঁস করেছে।
সংগঠনটি দাবি করে, তাদের হাতে থাকা বেলারুশের রাষ্ট্রায়ত্ত অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বেলস্পেজভনেশ টেকনিকার সঙ্গে মিয়ানমারের যোগাযোগ সংক্রান্ত দলিলপত্র থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
জেএফএম জানায়, চুক্তির আওতায় মিয়ানমার ভিথ্রিডি বিমান প্রতিরক্ষা রাডার এবং ভূভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা পাচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে ‘প্যানোরামা’ স্বয়ংক্রিয় লক্ষ্য নির্ধারণ প্রযুক্তি এবং ‘ভস্টক থ্রিডি রাডার’। এই প্রযুক্তি ড্রোনসহ বিভিন্ন আকাশে চলমান লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত ও ট্র্যাক করতে পারে, যা মিয়ানমারের সরকারবিরোধী গ্রুপগুলো ব্যবহার করে।
এছাড়া মিয়ানমারের সামরিক কারখানাগুলোতে অস্ত্র উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বেলারুশিয়ান স্টেট ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেটিক্স অ্যান্ড রেডিওইলেক্ট্রনিক্সে জান্তা-সংশ্লিষ্ট কর্মীরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বলেও জানায় জেএফএম।
বেলারুশ ২০২১ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এক প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল, যেখানে মিয়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছিল।
এই বছরের মার্চে মিয়ানমারের জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং বেলারুশ সফর করেন। গত সপ্তাহে তিনি আবার মিনস্কে যান এবং বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে অস্ত্র বিক্রয় ও বিনিয়োগ নিয়ে বৈঠক করেন। তিনি বেলারুশিয়ান একটি অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনও করেন, যেটি নাইট-ভিশন ডিভাইস এবং এয়ার ব্রেক তৈরিতে বিশেষজ্ঞ।
জান্তা-সমর্থিত সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, মিন অং হ্লাইং বেলারুশে অধ্যয়নরত মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তিতে বিশেষ দক্ষতা অর্জনের নির্দেশ দেন।
জেএফএম আরও জানিয়েছে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বেলারুশের সামরিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা একাধিকবার মিয়ানমার সফর করেছেন এবং স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সামরিক প্রযুক্তি প্রয়োগ সংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে জেএফএম মিয়ানমারের সঙ্গে বেলারুশের অস্ত্র ব্যবসায় জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ডাইনেস্টি গ্রুপ, এবং বেলারুশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেখানে জান্তা কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
জেএফএম মুখপাত্র ইয়াদানার মাউং বলেন, ‘রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণে বেলারুশের সমর্থনের প্রেক্ষিতে মিয়ানমারের জান্তার সঙ্গে বেলারুশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে এখনই গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক জান্তায় অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে হলে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত জরুরি।’
তথ্যসূত্র: দ্য ইরাবতী