শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫, ০১:৩৮ পিএম

উ. কোরিয়ায় বাড়ছে মৃত্যুদণ্ড, ভিনদেশি নাটক-সিনেমা দেখলেই বিপদ

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫, ০১:৩৮ পিএম

উত্তর কোরিয়ার এক অনুষ্ঠানে কিম জং উন। ছবি- সংগৃহীত

উত্তর কোরিয়ার এক অনুষ্ঠানে কিম জং উন। ছবি- সংগৃহীত

উত্তর কোরিয়ায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার ক্রমশ বাড়ছে, বিশেষ করে ভিনদেশি সিনেমা ও টিভি নাটক দেখা বা শেয়ার করার জন্যেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটি নাগরিকদের স্বাধীনতা আরও সীমিত করছে। গত এক দশকে উত্তর কোরিয়া নাগরিকদের জীবনযাত্রার প্রায় সব দিকেই নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘আজকের পৃথিবীতে আর কোনো জনগোষ্ঠী এতটা সীমাবদ্ধতার মধ্যে নেই।’ প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সহায়তায় নজরদারি ‘আরও বিস্তৃত’ হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টার্ক সতর্ক করে বলেছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে উত্তর কোরিয়ার মানুষ ‘আরও বেশি ভোগান্তি, নির্মম দমননীতি ও ভীতির মধ্যে পড়বে, যা তারা দীর্ঘদিন ধরে সহ্য করছে।’

গত ১০ বছরে উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসা ৩০০ জনের বেশি মানুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি এই প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত্যুদণ্ড আগের চেয়ে বেশি দেওয়া হচ্ছে। ২০১৫ সালের পর থেকে অন্তত ছয়টি নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যেখানে মৃত্যুদণ্ডের বিধান যুক্ত হয়েছে। ভিনদেশি মিডিয়া কনটেন্ট দেখা ও শেয়ার করাও এখন মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ।

২০২০ সালের পর থেকে ভিনদেশি কনটেন্ট বিতরণের জন্য মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা বেড়েছে বলে পালিয়ে আসা ব্যক্তিরা জাতিসংঘ গবেষকদের জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, জনসমক্ষে গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়, যাতে ভয় সৃষ্টি হয় এবং কেউ যেন আইন ভঙ্গের সাহস না পায়।

২০২৩ সালে পালিয়ে আসা কাং গিউরি জানান, তার তিন বন্ধু দক্ষিণ কোরিয়ার কনটেন্ট রাখার দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পান। তিনি ২৩ বছর বয়সি এক বন্ধুর বিচারকাজও প্রত্যক্ষ করেছিলেন, যাকে মাদক-সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের সঙ্গে বিচার করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের পর থেকে মানুষ আরও ভয় পেতে শুরু করেছে।’

২০১১ সালে কিম জং উন ক্ষমতায় আসার সময় অনেকের আশা ছিল জীবনযাত্রায় উন্নতি হবে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, জনগণের আর খাবারের অভাব হবে না। কিন্তু ২০১৯ সালে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে কূটনীতি পরিত্যাগ করে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিতে মনোযোগ দেওয়ার পর মানুষের জীবনযাত্রা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও অবনতি ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

অধিকাংশ সাক্ষাৎকারদাতা জানিয়েছেন, তাদের পর্যাপ্ত খাবার মেলে না, দিনে তিন বেলা খাওয়াটাও বিলাসিতা। কোভিড মহামারির সময় খাদ্য সংকট তীব্র হয়ে অনেকের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি, অনানুষ্ঠানিক বাজারে পারিবারিক বেচাকেনার ওপর দমননীতি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ কঠিন করে তোলে সরকার। এমনকি চীন সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার এবং সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করলেই গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

২০১৮ সালে পালিয়ে আসা ১৭ বছরের এক তরুণী বলেন, ‘কিম জং উনের শুরুর সময়ে কিছু আশা ছিল, কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি। সরকার ধীরে ধীরে মানুষের স্বাধীনভাবে জীবিকা অর্জনের পথ বন্ধ করেছে, আর বেঁচে থাকাটাই প্রতিদিনের যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গত দশ বছরে সরকার মানুষের ওপর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চালু করেছে। ফলে তারা আর অর্থনৈতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। উন্নত নজরদারি প্রযুক্তি এই নিয়ন্ত্রণকে সহজ করেছে।’

পালিয়ে আসা এক ব্যক্তি বলেন, ‘সরকার মানুষের চোখ-কান বন্ধ করতে এসব পদক্ষেপ নিচ্ছে। এটি এমন এক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা, যার উদ্দেশ্য সামান্যতম অসন্তোষ বা অভিযোগের চিহ্নও মুছে ফেলা।’

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১০ বছর আগের তুলনায় জোরপূর্বক শ্রমের হারও বেড়েছে। দরিদ্র পরিবার থেকে মানুষকে শারীরিকভাবে কষ্টকর কাজের জন্য ‘শক ব্রিগেড’-এ নিয়োগ দেওয়া হয়, যেমন নির্মাণ ও খনন প্রকল্প। এসব শ্রমিক সামাজিক মর্যাদা বাড়ার আশায় কাজ করেন, কিন্তু পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ এবং মৃত্যুর ঘটনাও সাধারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিরাপত্তা বাড়ানোর বদলে সরকার এসব মৃত্যুকে কিম জং উনের জন্য ‘উৎসর্গ’ হিসেবে গৌরবান্বিত করে। সম্প্রতি হাজার হাজার অনাথ ও পথশিশুকেও এই কাজে যুক্ত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটি ২০১৪ সালের ঐতিহাসিক জাতিসংঘ তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনের পর প্রকাশিত হলো, যেখানে প্রথমবারের মতো প্রমাণিত হয় যে উত্তর কোরিয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে। ২০২৫ সালের নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তত চারটি রাজনৈতিক কারাগার এখনো চালু আছে এবং সাধারণ কারাগারগুলোতেও বন্দিদের ওপর নির্যাতন চলছে।

জাতিসংঘ বলেছে, এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানো উচিত, তবে তা করতে হলে নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন প্রয়োজন। ২০১৯ সাল থেকে নিরাপত্তা পরিষদের দুই স্থায়ী সদস্য—চীন ও রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব বারবার আটকেছে।

গত সপ্তাহে বেইজিংয়ে এক সামরিক কুচকাওয়াজে কিম জং উন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে অংশ নেন, যা উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি এবং নাগরিকদের প্রতি আচরণের প্রতি এই দেশগুলোর নীরব সমর্থন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, উত্তর কোরিয়া সরকারকে রাজনৈতিক কারাগারগুলো বিলুপ্ত করা, মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার বন্ধ করা এবং নাগরিকদের মানবাধিকার সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে।

Link copied!